বছরের শুরুতেই লা লিগায় উস্কানিতে উত্যক্ত হয়ে গোলরক্ষককে আঘাত করে লাল কার্ড দেখলেন ভিনিসিউস জুনিয়র। পেনাল্টি মিস করলেন জুড বেলিংহ্যাম। ভালেন্সিয়ার বিপক্ষে দিক হারানো দলকে অতলে তলিয়ে যেতে দিলেন না লুকা মদ্রিচ। বদলি নেমে দলকে সমতায় ফেরালেন অভিজ্ঞ ক্রোয়াট মিডফিল্ডার। যোগ করা সময়ে স্বাগতিকদের উপহার কাজে লাগিয়ে দলকে তিন পয়েন্ট এনে দিলেন বেলিংহ্যাম।
শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) ভালেন্সিয়ার মাঠে উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচে ২-১ গোলে জয় পেয়েছে রিয়াল।
উগো দুরোর গোলে অনেকটা সময় এগিয়ে থেকে দারুণ এক জয়ের আশা জাগিয়েছিল ভালেন্সিয়া। তবে মদ্রিচ সমতা ফেরানোর পর বেলিংহ্যামের গোলে ঘুরে দাঁড়ানোর আরও একটি দারুণ গল্প উপহার দিল কার্লো আনচেলত্তির দল।
শেষের কিছুটা সময় ১০ জন নিয়েও এই জয়ে নতুন বছরে শীর্ষে উঠে এলো রিয়াল। ১৯ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৪৩। এক ম্যাচ কম খেলা আতলেতিকো মাদ্রিদ ৪১ পয়েন্ট নিয়ে নেমে গেল দুইয়ে।
পঞ্চম মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় রেয়াল। ফেদে ভালভের্দের গতিময় শট ঠেকিয়ে দেন ভালেন্সিয়া গোলরক্ষক স্তলে দিমিত্রিয়েভস্কি।
দুই মিনিট পর দারুণ সুযোগ পান দুরো। ডি বক্সের ভেতর থেকে জোরাল শট নেন স্প্যানশি ফরোয়ার্ড। তবে শরীরের বেশ কাছে থাকায় ফেরাতে খুব একটা সমস্যা হয়নি রেয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ার। কয়েক সেকেন্ড পর আন্দ্রে আলমেইদার দুর্বল হেডও ঠেকান তিনি।
দ্বাদশ মিনিটে দিমিত্রি ফুলকিয়ের শট ঠেকিয়ে দেন কোর্তোয়া। ছয় মিনিট শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ভালেন্সিয়ার হাভিয়ের গেররা।
২৭তম মিনিটে খুব কাছ থেকে গেররার শট কোনোমতে ফিরিয়ে দেন কোর্তোয়া। ফিরতি বলে সুযোগ কাজে লাগান দুরো। ছুটে গিয়ে অনায়াসে জাল খুঁজে নেন তিনি।
৩৮তম মিনিটে ভালভের্দের বুলেট গতির শট বেরিয়ে যায় ক্রসবার ঘেঁষে! পাঁচ মিনিট পর ভিনিসিউসের শট পা দিয়ে কোনোমতে ফিরিয়ে দেন দিমিত্রিয়েভস্কি। পিছয়ে থেকে বিরতিতে যায় রেয়াল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবলে ভালেন্সিয়াকে চেপে ধরার চেষ্টা করে রিয়াল। তবে একের পর এক ফাউলে বারবার গতি হারায় খেলা।
৫২তম মিনিটে ডি বক্সে কিলিয়ান এমবাপে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় রিয়াল। বেলিংহ্যামের নিচু গড়ানো শট ফেরে পোস্টে লেগে! স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের হয়ে এই প্রথম পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হলেন তিনি।
পেনাল্টির জন্য ওই ফাউল যথেষ্ট ছিল কী না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ধারাভাষ্যকাররা। আবার বেলিংহ্যাম শট নেওয়ার আগেই ভালেন্সিয়া গোলরক্ষকের লাইন ছেড়ে বেরিয়ে আসা এবং কয়েক জন খেলোয়াড়ের ডি বক্সে ঢুকে পড়ার পরও ফের শট নেওয়ার সুযোগ না দেওয়ারও সমালোচনা করেন তারা।
৫৮তম মিনিটে বল জালে পাঠান এমবাপে। তবে বেলিংহ্যামের পাস পাওয়ার সময় তিনিই অফসাইডে থাকায় মেলেনি গোল। নয় মিনিট পর অহেলিয়া চুয়ামেনির ক্রসে রদ্রিগোর দারুণ হেড ক্রসবার ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
৭৯তম মিনিটে বড় এক ধাক্কা খায় রেয়াল। ভালেন্সিয়া গোলরক্ষকের ঘাড়ে আঘাত করে লাল কার্ড দেখেন ভিনিসিউস জুনিয়র। ভিএআর মনিটরে দেখে রেফারি যখন তাকে কার্ড দেখান তখন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাতে যাচ্ছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। কিন্তু সতীর্থরা ও কোচিং স্টাফের সদস্যরা তাকে অনকেটা জোর করে সেখান থেকে সরিয়ে নেন।
৮৫তম মিনিটে রেয়ালকে সমতায় ফেরান একটু আগে বদলি নামা মদ্রিচ। বেলিংহ্যামের দারুণ পাস পেয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করে জাল খুঁজে নেন ক্রোয়াট মিডফিল্ডার।
যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে এগিয়ে যায় রিয়াল। ফুলকিয়ের কাছ থেকে বল পেয়ে উদ্দেশ্যহীন দুর্বল ব্যাক পাসে বিপদ ডেকে আনেন উগো গিয়ামন। সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ঠিকানা খুঁজে নেন বেলিংহ্যাম।
ম্যাচের শেষ শটে বদলে যেতে পারত ম্যাচের ফল। ভালেন্সিয়া ফরোয়ার্ড লুইস রিয়োহার জোরাল শট পোস্টের উপরের দিকে লেগে ফেরে মাঠে। নতুন কোচ কার্লোস কোর্বেরানের পথ চলা শুরু হল হার দিয়ে। অন্য দিকে কঠিন এই লড়াইয়ে ১০ জন নিয়েও জেতার স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ল রিয়াল।
আনন্দবাজার/ফারুক