সিঙ্গাপুরের আইন অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখা যায় না। তাই সম্প্রতি সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করায় তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হয়েছে। বণিক বার্তার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. তানভীর আহমেদ বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের আইনে যদি দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখার সুযোগ না থাকে সেক্ষেত্রে আগে তাকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট হস্তান্তর করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি অনুমোদন নিতে হবে যে তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নেবেন এবং তিনি আর বাংলাদেশের নাগরিক নন। তিনি এ ধরনের অনুমোদন এরই মধ্যে নিয়েছেন এবং সেটি সিঙ্গাপুরের কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার কারণেই দেশটির নাগরিকত্ব পেয়েছেন বলে ধরে নেওয়া যায়।’
বাংলাদেশের সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান সাত বছর ধরেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় আছেন। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের করা এ তালিকায় তিনি প্রথম জায়গা করে নেন ২০১৮ সালে। ২০২২ সাল থেকে তিনি ফোর্বসের বৈশ্বিক বিলিয়নেয়ার তালিকায়ও রয়েছেন। এতদিন পর্যন্ত এ তালিকায় তার নাম এসেছে একমাত্র বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে। পাশাপাশি তাকে উল্লেখ করা হয়েছে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী নিবাসী হিসেবেও।
তবে সম্প্রতি ফোর্বস প্রকাশিত সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় আজিজ খানকে দেশটির নাগরিক হিসেবেই পরিচয় দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজিজ খান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করায় ফোর্বসের হালনাগাদ তালিকায় তার এ-সংক্রান্ত তথ্য পরিবর্তন করা হয়েছে।
গত বছর সিএনএ লাক্সারিতে মুহাম্মদ আজিজ খানের ব্যক্তিগত চিত্র সংগ্রহশালা ও শিল্পপ্রেম নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। এতে ব্যবসায়িক কারণে তার সিঙ্গাপুর ভ্রমণ ও দেশটির স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বসবাসের বিষয়টি উঠে আসে। এতে বলা হয়, আজিজ খান সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা ১৯৮৮ সাল থেকে। ২০১৬ সালে তিনি দেশটিতে তার কোম্পানি সামিটের প্রধান কার্যালয় স্থানান্তর করেন।
এ বছরের সেপ্টেম্বরে ফোর্বস সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর ২০২৪ সালের বার্ষিক তালিকা প্রকাশ করে। এ তালিকার অন্তর্ভুক্ত ধনীদের সম্পদ ও অন্যান্য তথ্যও হালনাগাদ করা থাকে। ফোর্বসের হিসাবে গতকাল পর্যন্ত আজিজ খানের সম্পদের পরিমাণ ছিল ১১০ কোটি ডলার। তাকে বাংলাদেশে জন্ম নেয়া একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেয়া হলেও সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন আজিজ খান, তার স্ত্রী ও সন্তানরা দীর্ঘদিন ধরেই সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন। মাঝেমধ্যে তারা বাংলাদেশে এলেও বছরের বেশির ভাগ সময় সিঙ্গাপুরেই থাকেন। তার ভ্রাতুষ্পুত্রও দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন।
এ বিষয়ে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার কাছ থেকে সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সামিটের আজিজ খানের নাগরিকত্বসংক্রান্ত বিষয়টি সংশ্লিষ্ট নথি যাচাই না করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।
১৯৫৫ সালে জন্ম মুহাম্মদ আজিজ খানের। শীর্ষ এ ব্যবসায়ী তার স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে।
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, আজিজ খানের বয়স এখন ৬৯ বছর। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিক ও অবকাঠামো খাতের ব্যবসা আছে সামিট গ্রুপের। সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের অধীনে সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ ব্যবসার পাশাপাশি ভাসমান স্টোরেজ ও রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) এবং এলএনজি টার্মিনালসহ সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানি সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের মাধ্যমে বন্দর ব্যবসা, সামিট কমিউনিকেশনসের মাধ্যমে ফাইবার অপটিকসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসা এবং আবাসন খাতের ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে সামিট গ্রুপের।
গত আগস্টে আওয়ামী সরকারের পতনের পর ব্যবসায়িকভাবে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে সামিট গ্রপ। এরই মধ্যে বেশকিছু তদন্ত চলছে গ্রুপটির বিরুদ্ধে। সামিটের দ্বিতীয় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানি সামিট পাওয়ারের মালিকানায় থাকা ১৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে বর্তমানে পাঁচটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে প্রথমবারের মতো ব্যবসায়িকভাবে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে সামিট গ্রুপ।