শিক্ষার্থীদের হলের সমস্যা দূর করতে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।চুক্তির আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন এবং মানসম্মত আবাসনের সুযোগ পাবে।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিন এবং আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষে জেনারেল সেক্রেটারি জনাব মো. শাব্বির আহমদ এই স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
গত ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবাসিক সংকট সাময়িক নিরসনের উদ্দেশ্যে দেশি-বিদেশী অনুদান/স্পন্সর পাওয়ার বিষয়ে প্রশাসন গত ৩ ডিসেম্বর কমিটি গঠন করে। তারই প্রেক্ষিতে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সাথে এমওইউ স্বাক্ষর হয়।
সমঝোতা অনুযায়ী, কেরাণীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রজেক্ট এলাকায় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন প্রাথমিকভাবে ৭০০ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা করবে। পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা ৫,০০০ শিক্ষার্থীতে উন্নীত করা হবে। ছেলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্যও আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
আবাসন সুবিধার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নৈতিকতার বিকাশে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই প্রকল্পের আওতায় থাকবে:
- একটি অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, যেখানে ১০০টি কম্পিউটার থাকবে।
- শিক্ষার্থীদের জন্য আইইএলটিএস প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ। প্রথম বছর প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ব্র্যান্ড স্কোর ৭ অর্জনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
- সফট স্কিল, নেতৃত্বগুণ এবং পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
২০২৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে এই আবাসন প্রকল্প চালু হবে বলে জানানো হয়। উক্ত আবাসনের যাবতীয় ব্যয় আস-সুন্নাহ বহন করবে। তবে অস্থায়ী আবাসন থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াতের পরিবহন ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে। অকৃষি খাস জমি ব্যবস্থা করতে পারলে জবিকে হল তৈরি করে দেয়ার প্রস্তাবনা দেয় আস-সুন্নাহ।
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আবাসন সমস্যা সমাধানে আমরা আনন্দিত। এখানে ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মেধার ভিত্তিতে আবাসনের সুযোগ দেওয়া হবে। শুধু মুসলিম শিক্ষার্থী নয়, ভিন্ন ধর্মের শিক্ষার্থীরাও তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের সুযোগ পাবে।”
উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি বলেন, “গত ১২ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত অনুসারে আমরা আবাসন সংকট সমাধানে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ করছি। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে এই চুক্তি একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। আমরা ইউজিসিতে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি, যা অনুমোদিত হলে অস্থায়ী হল নির্মাণ শুরু হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এ সংকট সমাধানে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সফলতা পেলে তা প্রকাশ করা হবে।”
সমঝোতা স্মারকের আওতায় উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি পরামর্শক বোর্ড গঠন করা হবে। এই বোর্ড প্রকল্প পরিচালনা এবং সমস্যার সমাধান করবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান, ছাত্র হল-১ এর প্রভোস্ট মুহম্মদ আসাদুজ্জামান সাদী, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক ড. কে. এ. এম. রিফাত হাসান, আইকিউএসির পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ আবু লায়েকসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আনন্দবাজার/ফারুক