ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আধিপত্যবাদ-একনায়কতস্ত্রসহ নানা নৈরাজ্যের অবসান ঘটেছিলো এদিন / জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ

আজ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে রাষ্ট্র বিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্র রুখে দিতে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সিপাহী-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলো। অবসান ঘটেছিলো আধিপত্যবাদ, একনায়কতস্ত্র, একদলীয় শাসন, জন-জীবনের বিশৃঙ্খলাসহ ঐ সময়ে বিরাজমান সকল নৈরাজ্যের।

১৯৭৫ সালের ৩ থেকে ৬ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছিল। হুমকির মুখে পড়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব। 

তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি উচ্চাভিলাষী দল তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বন্দি করে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিলো। এ ঘটনায় সিপাহীসহ দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

জিয়াউর রহমান ছিলেন সেনাবাহিনীর সর্বমহলে, বিশেষতঃ সিপাহীদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যাক্তিত্ব। ফলে তারা পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা গ্রহণ ও জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এর ধারাবাহিকতায়, ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে ঘটে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ এক বিপ্লব। সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মাধ্যমে রক্ষা পায় বাংলাদেশের অর্জিত স্বাধীনতা। কয়েকদিনের দুঃস্বপ্নের প্রহর শেষে সিপাহী-জনতা ক্যান্টনমেন্টের বন্দিদশা থেকে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে এবং সর্বজন সিদ্ধান্তে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে। অস্থিতিশীল পরিবেশ থেকে দেশ  ফিরে আসে একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশে। 

ইতিহাসের এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণের জন্য বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন ৭ নভেম্বরকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

৭ নভেম্বরের বিপ্লব সম্পর্কে দৈনিক বাংলার তৎকালীন রিপোর্টে বলা হয়, “সিপাহী ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চারদিনের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১টায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীর সিপাহী-জওয়ানরা বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন। ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেছেন বিপ্লবী সিপাহীরা। 

৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোরে রেডিওতে ভেসে আসে, ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি।’ জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। ওইদিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। পথে পথে সিপাহী-জনতা আলিঙ্গন করেছে একে অপরকে। নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ধ্বনিতে ফেটে পড়েন তারা। সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে ভন্ডুল হয়ে যায় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী সব ষড়যন্ত্র। আনন্দে উদ্বেলিত হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন রাজপথে। সাধারণ মানুষ ট্যাঙ্কের নলে পরিয়ে দেন ফুলের মালা। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের সব শহর-নগর-গ্রামেও পৌঁছে যায়।”

সংবাদটি শেয়ার করুন