দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশের মোট ১৮৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কেবল সাত কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকিরা কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন, অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন।
পুলিশের সব মিলে ১৮৭ জন সদস্য নিরুদ্দেশ রয়েছেন। যদিও ধারণা করা হচ্ছে এ সংখ্যা আরেকটু বেশি। তারা ৫ অগাস্টের পর থেকেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অতিরিক্ত ডিআইজি ও ডিআইজি পদমর্যাদার কয়েকজন দেশ ছেড়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিপ্লব কুমার সরকার, মেহেদী হাসান, খন্দকার নুরুন্নবী, সঞ্জিত কুমার, প্রলয় কুমার জোয়ারদার, সৈয়দ নুরুল ইসলাম। অবসরে পাঠানো হাবিবুর রহমান, মনিরুল ইসলাম, আবদুল বাতেন ও মনিরুজ্জামানও বিদেশে চলে গেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তর মামলার আসামি ১৮৪ জনের মধ্যে সাবেক-বর্তমান অন্তত ২৬ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের অনুমতি নিয়েছে। সবার বিরুদ্ধেই হত্যা মামলা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আইজিপি থেকে শুরু করে পরিদর্শক পদের কর্মকর্তারা আছেন। তাঁদের বেশির ভাগই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্রমতে, পুলিশ সদর দপ্তরের কনফিডেনশিয়াল শাখা থেকে সাবেক-বর্তমান এই ২৬ জনকে গ্রেপ্তারের জন্য মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখা-১ থেকে তিন ধাপে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। অনুমতি চেয়ে করা আবেদনে গ্রেপ্তারের কারণও ব্যাখ্যা করা হয়। এই ২৬ জন ছাড়াও বিগত সময়ে প্রভাবশালী এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা আরও কর্মকর্তার নাম তালিকায় রয়েছে। তাঁদেরও গ্রেপ্তারের জন্য ধাপে ধাপে অনুমতি নেওয়া হবে। কাউকে কাউকে আগে আটক করে পরে গ্রেপ্তারের অনুমতি নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং অস্ত্র-গুলি লুট করা হয়। এসব ঘটনায় নিহত হন পুলিশের ৪৬ সদস্য। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার সময় কর্মবিরতিতে ছিল পুলিশ। পরে পুলিশের শীর্ষ পদসহ বিভিন্ন পদে রদবদল, বদলি করা হয়। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় বিভিন্ন পর্যায়ের ২৩ কর্মকর্তাকে। পুলিশের অনেক কর্মকর্তা এখনো কর্মস্থলে ফেরেননি। কেউ কেউ কর্মস্থলে যোগ দিয়েই ছুটিতে চলে গেছেন। ফলে পুলিশ বাহিনী এখনো পুরো সক্রিয় হয়ে ওঠেনি।