হাসিনা সরকারের পতনের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম পদত্যাগের ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে শূন্য রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী পদটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নীতি-নির্ধারণের এই পদটি শূন্য থাকায় স্থবির হয়ে আছে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র স্বাক্ষর অনুমোদন না হওয়ায় প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জানা যায়, গত ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও বহিরাগত সন্ত্রাসী কর্তৃক আন্দোলনকারীদের হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবনে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমকে আর দেখা যায়নি। এরপর কয়েকদিন রেজিস্ট্রার ভবনে এসে অফিস করলেও অবস্থান করেননি বাসভবনে। সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ৭ আগস্ট সকালে অনলাইনে জরুরি সিন্ডিকেট সভা করেন। পরে ওইদিন দুপুরে মেইলে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানিয়েছিলেন চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার (সদ্য সাবেক) আবু হাসান। এর আগে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নূরুল আলমকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।
এদিকে ৭ আগস্ট অনলাইনে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় সেদিনই আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হয়। একই সভায় ১১ আগস্ট থেকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। তবে বিভিন্ন বিভাগের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভাগগুলোতে এখনো পরিপূর্ণ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। এখনো সব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ফেরেনি। শিক্ষকরাও অনেকে এখনো বিভাগে আসেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর ১২ (১) ধারা অনুযায়ী উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পূর্ণকালীন প্রধান নির্বাহী ও অ্যাকাডেমিক কর্মকর্তা। এছাড়াও তিনি সিনেট, সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভাপতি। আইনের ১২ (৫) ধারা বলে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের নিয়োগ, বরখাস্ত ও বরখাস্ত সংক্রান্ত সিন্ডিকেটের আদেশ কার্যকর করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যদের উপর সাধারণ নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করবেন এবং এই আইন, সংবিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলার জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন। এছাড়া ১২ (৮) অনুসারে উপাচার্য সংবিধি, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ও প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন।
তবে গত এক সপ্তাহ ধরে উপাচার্য না থাকায় কাজগুলো হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের রুটিন দায়িত্বে নিযুক্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান বলেন, উপাচার্য না থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রমগুলো একপ্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। হচ্ছে না নিয়োগ বোর্ডসহ উপাচার্য সংশ্লিষ্ট সভাগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার অনুরোধ করছি।
ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উপাচার্য। এই পদ শূন্য থাকায় অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজগুলো ঠিকমতো হচ্ছে না। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আচার্য খুব দ্রুতই উপাচার্য নিয়োগ দিবেন।