ছাত্র আন্দোলনের মুখে সোমবার (০৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। এরপর দেশে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ পদধারীদের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। দিন দিন এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, এ সময় যারা পদত্যাগ করেছেন, তাদের প্রায় সবাই-ই আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও মদদপুষ্ট বলে পরিচিত।
বুধবার (০৭ আগস্ট) ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। এদিন দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। পদত্যাগপত্রটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র দেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। পদত্যাগপত্রে তিনি ব্যক্তিগত ও শারীরিক অসুস্থতার কারণ উল্লেখ করেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অফিস খোলার দ্বিতীয় দিন বুধবার কর্মকর্তাদের ক্ষোভে চরম অস্থিরতা বিরাজ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে। এরই মধ্যে চার ডেপুটি গভর্নর, হেড অব বিএফআইইউ ও নীতি উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছেন। আজ অফিস করেননি গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তবে গভর্নরের পদত্যাগ ও গ্রেফতার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এছা্ড়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে বরখাস্তের দাবিতে আজ বুধবার বিক্ষোভ করেছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করে আয়কর, কাস্টমস এবং এক্সাইজ ও ভ্যাট ক্যাডার থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া, প্রশাসন ক্যাডার থেকে কোনো কর্মকর্তাকে প্রেষণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পদায়ন না করাসহ ৯ দাবি জানিয়েছেন তারা।
দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) থমথমে অবস্থা। বুধবার সকাল থেকেই সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। যদিও তার আগে দুদক চেয়ারম্যানের পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে চেয়ারম্যান দপ্তর সূত্র বলছে, চেয়ারম্যানের পদত্যাগের তথ্য সঠিক নয়, এটা গুজব। এখনো তো সরকার গঠন হয়নি। নতুন সরকার পুনর্গঠন হলে তারা এই কমিশন রাখবে কি না, সেটা দেখার বিষয়। তবে দু-একদিনের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন বলেও জানিয়েছে এক সূত্র।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর অফিসে আসেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। মঙ্গলবার না এলেও আজ বুধবার অফিসে আসেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব এবং মো. আলমগীর। এদিন দুপুর একটার দিকে ইসি ভবনে আসেন ইসি সচিব শফিউল আজিম। তবে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা ও মো. আনিছুর রহমান অফিসে আসেননি।
শিক্ষাঙ্গনেও পদত্যাগের হিড়িক। পদত্যাগ করেছেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশীদ। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও ছাত্র পরামর্শকে পদত্যাগের জন্য আল্টিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেকৃবি সমন্বয়ক মো. তৌহিদ আহমেদ আশিক।
পদত্যাগ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম। আজ বুধবার রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে ই-মেইলযোগে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। পদত্যাগপত্রে নূরুল আলম বলেন, গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং সে অনুসারে আমি আমার দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ সচেষ্ট ছিলাম। বর্তমানে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে আমি উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক ও প্রধানরা পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, পরিবহন পুলের পরিচালক, লাইব্রেরি পরিচালক, বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট, বহিরাঙ্গণ বিভাগের পরিচালক এবং ছাত্র উপদেষ্টা ও পরামর্শ দপ্তরের পরিচালক পদত্যাগ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শরিফুল ইসলাম, পরিবহন পুলের দায়িত্বে ছিলেন প্রফেসর কামরুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু হলের পরিচালক বিজন মোহন চাকি, বহিরাঙ্গন বিভাগের পরিচালক সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী এবং ছাত্র উপদেষ্টা ও পরামর্শ দপ্তরের পরিচালক ছিলেন সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম।
তবে, ক্রীড়াঙ্গনেও রয়েছে পদত্যাগের দাবি। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশের ক্রীড়াঙ্গনে শীর্ষ পদগুলোতে রদবদলের দাবি তুলেছেন অনেকেই। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী এবং নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণের পদত্যাগ দাবি করেছেন ‘বাংলাদেশ ফুটবল আলট্রাস’ নামে সমর্থকদের একটি সংগঠন। এ দাবিতে বাফুফে ভবন ঘেরাও করে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা। গত ১৬ বছর ধরে বাফুফে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কাজী সালাউদ্দিন। দুর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন সময় তার পদত্যাগের দাবি উঠলেও স্বপদে বহাল ছিলেন।