ঢাকা | রবিবার
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামের বেলগাছায় বানভাসিদের ত্রাণ সহায়তা সচ্ছলদের ঘরে

কুড়িগ্রামের বেলগাছায় বানভাসিদের ত্রাণ সহায়তা সচ্ছলদের ঘরে

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলাধীন বেলগাছা ইউনিয়নে ১৮০টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বন্যা কবলিত, জলাবদ্ধতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থ্য পরিবারের জন্য সরকারের খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ থেকে এ ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে বেলগাছায় ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তালিকা ধরে সরেজমিনে অনুসন্ধানে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়।

বেলগাছা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের পলাশবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা শ্রমিক সর্দার নুর আমিন। গতবছর তার বাড়ির পাশে পাকা সড়কের সাথে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে জমি কিনেছেন। সেই জমিতে সবজি চাষ করেছেন। বাড়িতে টিনের ঘর। বন্যা কিংবা জলাবদ্ধতার কোনও ছাপ নেই। তালিকায় ৯০ নং ক্রমিকে তার নাম। তিনি পেয়েছেন বন্যাকবলিতদের ত্রাণ।

৪ নং ওয়ার্ডের হরিরাম এলাকার বাসিন্দা হায়দার আলী। তালিকায় ১৫৪ নং ক্রমিকে তার নাম। তার দুই ছেলের একজন কাজী ফার্মে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত অপরজন সেনাবাহিনীর সদস্য। সেমিপাকা চকচকে বাড়ি। বাড়ির পিছনে সুপারী গাছের বাগান। বাড়ীর কোথাও জলাবদ্ধতা নেই। তিনিও পেয়েছেন বন্যাকবলিতদের ত্রান সহায়তা।

১ নং ওয়ার্ডের পলাশবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক। দুই ছেলে গোলজার ও রিপন মিয়া দূরপাল্লার গাড়ি চালক। কয়েক শতক জমির ওপর উঁচু ভিটায় সেমিপাকা দালানের বাড়ি। সামর্থবান এই পরিবারের বাবা ও দুই ছেলের সবাই বন্যা কবলিতদের জন্য বরাদ্দের ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন। তালিকায় তাদের নাম ১২১, ১২২ ও ১২৩ ক্রমিকে।

একই গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মুকুল (ক্রমিক নং ১২৭)। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), কুড়িগ্রামের ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলীর গাড়ি চালক। পলাশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা এই গাড়ি চালকও পেয়েছেন বানভাসিদের জন্য বরাদ্দের ত্রাণ।

৬ নং ওয়ার্ডের শিবের পাঠ এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জলিলের ছেলে রিপন মিয়া। যৌথ পরিবার। তালিকায় ৬ নং ক্রমিকে তার নাম। রয়েছে ৫/৬ কক্ষ বিশিষ্ট সেমি দালান বাড়ি। রয়েছে দুই একরেরও বেশী আবাদি জমি। রিপনের এক ভাই পুলিশে চাকুরী করেন। আর এক ভাই কুড়িগ্রামের সেন্ট্রাল ক্লিনিকে কর্মরত। সকলে একসঙ্গে যৌথভাবে থাকেন এবং একই হাড়িতে খান। তিনিও পেয়েছেন বানভাসিদের বরাদ্দের ত্রাণ।

এই ইউনিয়নে বন্যাকবলিতদের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন সামর্থবানরা। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, বাড়িতে পাকা দালান ঘর এমন পরিবারের সদস্যরা পেয়েছেন বানভাসিদের জন্য বরাদ্দের খাদ্য সহায়তা। অথচ ইউনিয়নটি বন্যা কবলিত নয়।

তালিকায় স্থান পাওয়া ১০০ নং ক্রমিকে রয়েছে আব্দুর রহিমের নাম। ত্রিমোহনী বাজার মসজিদের ঠিক দক্ষিণে কুড়িগ্রাম-রাজারহাট সড়কের সাথে তার বাড়ি। বাড়ির সামনে ৪/৫ টি দোকানঘর ভাড়া দেওয়া। সেমিপাকা ঘরের বাড়ি লাগোয়া কয়েক কোটি টাকা মূল্যের এক একরেরও বেশি সম্পত্তি রহিমের। অথচ তিনিও ‘বন্যাকবলিত’!

সদরের বেলগাছা ইউনিয়নে বন্যার কোনও ছোঁয়া নেই। এই ইউনিয়নের অদূরে কোনও নদ-নদীও নেই। ছোট কিংবা বড় জেলায় যে বন্যা আঘাত করুক না কেন এই ইউনিয়ন থাকে সবসময় নিরাপদ। অথচ বন্যা কবলিত পরিবারের অগ্রাধিকার তালিকায় এই ইউনিয়নের ১৮০ পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, তালিকায় থাকা এই ইউনিয়নের বেশিরভাগ পরিবার স্বাবলম্বী ও সামর্থবান। তাদেরকে কোন বিবেচনায় বন্যাকবলিতদের জন্য বরাদ্দের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বেলগাছা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের তিন বার নির্বাচিত সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ ব্যাপারি বক্তার বলেন, ‘ ইউনিয়নে যেসব পরিবারে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে তাদের প্রায় সকলেই স্বচ্ছল এবং কর্মক্ষম। অনেক অস্বচ্ছল ও দুস্থ পরিবার বঞ্চিত। সরকারকে বিতর্কিত করতে কে বা কারা এই তালিকা করেছেন তা আমার জানা নাই।’

উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বেলগাছা ইউনিয়নে ১ টন চাল ও ৮০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ( ৯ জুলাই) ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর থেকে এসব বরাদ্দ বিতরণ করা হয়।

বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিটন মিয়া বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে বন্যা নেই। তবে ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে যাওয়া একটি নালার পাশে বসবাসকারী কিছু পরিবারে জলবদ্ধতা রয়েছে। তবে সে সংখ্যা কম। একই ভাবে কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন বন্যা কবলিত না হলেও সেখানেও এই সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’
তালিকায় সামর্থবানদের নাম প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, ‘ তালিকা উপজেলা পরিষদ থেকে করেছে। আমি শুধু বিতরণকারী।’

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুসফিকুল আলম হালিম বলেন, ‘ অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধ দিনমজুর পরিবারের কথা বিবেচনায় নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের পরামর্শে বেলগাছা ইউনিয়নে একদফা ১ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তবে তালিকায় সামর্থবান পরিবারের নাম থাকার বিষয়টি জানা নেই।’

সংবাদটি শেয়ার করুন