ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘূর্ণিঝড় রেমাল: উপকূলে বৃষ্টি, বইছে ঝড় বাতাস

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রোববার (২৬ মে) সকাল থেকে খুলনার উপকূলবর্তী কয়রা, পাইকগাছা ও দা‌কো‌পে হালকা বৃষ্টির সাথে দমকা বাতাস দেখা যায়। ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে উপকূলীয় এলাকার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করে। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পে‌য়ে বি‌ভিন্নস্থান দি‌য়ে ছা‌পি‌য়ে লোকাল‌য়ে প্রবেশ করে। উপকূলীয় এলাকায় সকাল থেকে মাইকিং করে জনসাধারণকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমাল আতঙ্কে উপকূলবাসী চরম শঙ্কায় র‌য়ে‌ছে। আগের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে গৃহহারা হয়ে পাউবো’র বেড়িবাঁধ অথবা উচু কোন স্থানে টোং ঘর বেধে বসবাসকারি লোকেরা ফের গৃহহারা হওয়ার আতঙ্কে রয়েছে। উপকূলের মানুষের খাওয়া-ঘুম হারাম হয়ে গেছে। শ‌নিবার রাত ‌থে‌কে রোববার সারাদিন স্বেচ্ছাশ্রমে দুর্বল বেড়িবাঁধ সংস্কার করে‌ছে স্থানীয় জনগণ।

জানা যায়, দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ বেড়িবাঁধই দুর্বল। বারবার বাঁধ ভাঙ্গায় উপকূলবাসী সংকেত পেলেই আতঙ্কে থাকেন। উপকূলীয় কয়রা উপজেলার সু‌তির অ‌ফিস, ৬ নং কয়রা, দোশহা‌লিয়া, ঘুগরাকাটিসহ বেশ ক‌য়েকটি স্থা‌নে বেড়িবাঁধ চুইয়ে ও ছা‌পি‌য়ে জোয়া‌রের পানি লোকাল‌য়ে প্রবেশ ক‌রে। বাঁ‌ধের দুর্বলস্থানগু‌লো স্বেচ্ছাশ্রমে এলাকাবাসী মেরামত করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সেখানে সিন‌থে‌টিক ব্যাগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যে কোন সময় দুর্বল বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা। এমন আশংকায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে খুলনা জেলার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা উপকূলের মানুষ।

কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের বাঁধের পাশে বসবাসকারী আখতারুজ্জামান ও বিল্লাল হোসেন জানান, আইলার সময় ঘাঁটাখালি বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়। এরপরে প্রায় দুই মাস আশ্রয় কেন্দ্রে থাকেন। সেখান থেকে বাঁধের উপরে ঝুপড়ি বেঁধে বসবাস শুরু করেন। একপর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের কথায় বাঁধের স্লোবে পুনরায় ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। আইলার ১৫ বছর পরেও তারা নিজ ঠিকানায় ফিরতে পারেননি। সেখানে বাঁধের পাশে প্রায় শতাধিক পরিবার রয়েছে। তারা রেমাল ঝড়ের সংকেত পেয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।

কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোঃ আবু সাঈদ বিশ্বাস বলেন, সুতির অফিস এলাকায় দুপুরের জোয়ারের পানি পিচের রাস্তা ছাপিয়ে লোকালয়ে ঢোকে। আমার এলাকায় সাইক্লোন শেল্টারে যেতে হলে একটি বড় নদী পার হতে হয়। বৃদ্ধ ও নারীদের আশ্রয় কেন্দ্রের নিতে চরম দুর্ভাগ পোহাতে হয়।

উত্তর বেদকা‌শি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম সরদার বলেন, কাটকাটা থেকে গাববুনিয়া পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ক‌য়েক‌টিস্থা‌নের বাঁ‌ধ তাৎক্ষ‌ণিক সংস্কার করা হ‌চ্ছে।

কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আছের আলী মোড়ল জানান, তার ইউনিয়নের ঘড়িলাল থেকে চরামুখা খেয়াঘাট, খেয়াঘাট থেকে হলদিবুনিয়া পর্যন্ত বেশি ঝুঁর্কিপূর্ণ।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিভাগ-২) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম ব‌লেন, খুলনার পাইকগাছা ও কয়রায় প্রায় ১০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। কিছুস্থানে দুপুরে জোয়ারের পানি ছাপিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। সেসব স্থানে তাৎক্ষণিক সিনথেটিক ব্যাগ দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে।

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া ৩টি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ আশ্রয় ও ৫৬০টি গবাদি পশু রাখা যাবে। কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন