প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে বান্দরবান সদর উপজেলার ভাগ্যকুল মাজার গেইটের ব্রীজ থেকে আলী নগর স্কুল পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সড়কে কার্পেটিং করার পরদিনই হাত দিয়ে কার্পেটিং তুলে ফেলছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে আসছে সড়কের কার্পেটিং। মাত্র কয়েক দিন আগেই সংস্কার করা হয়েছে বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের ভাগ্যকুল মাজার গেইট ব্রিজ হতে আলি নগর স্কুল পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এলজিইডির অর্থায়নে ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে শুরু হয় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির সংস্কার কাজ। এলাকাবাসীর অভিযোগ সড়ক সংস্কারের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের খোয়া পাথর ও বিটুমিন। শুধু তাই নয় বৃষ্টির পানির মধ্যে কাদামাটি ও ময়লা পরিষ্কার না করেই করা হয়েছে কার্পেটিং এর কাজ। এছাড়া সড়কে থাকা পুরনো পাথর গুলো পরিস্কার না করেই ব্যবহার করা হয় একই কাজে। স্থানীয়রা অভিযোগ দেয়া সত্ত্বেও তদারকি না করায় ঠিকাদার নিজের ইচ্ছে মত অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কোন রকমে সম্পন্ন করছে কাজটি। তাই সংস্কারের এক সপ্তাহ না যেতেই উঠে যাচ্ছে সড়কের কার্পেটিং। এতে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। তাই কাজটি বাতিল করে পুনরায় সংস্কারের দাবী স্থানীয়দের।
ভাগ্যকুল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা করিমুদ্দিন বলেন, কার্পেটিং করেছে মাত্র কিছুদিন হচ্ছে। এর মধ্যে হাতে টান দিলেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। তার চেয়ে আগের রাস্তাই ভালো ছিল। সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা নির্মাণ করার কোন মানেই নেই। সরকারের টাকা অপচয় ছাড়া আর কিছু না।
আলীনগর এলাকার বাসিন্দা কুদ্দুছ বলেন, কাজ শেষ হতে না হতেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এ কাজ এক মাসও ঠিকবে না। সঠিক ভাবে কাজ না করার কারণে কাজের এই অবস্থা। এ ধরনের রাস্তা আমরা জীবনেও দেখি নাই। আমরা সঠিকভাবে রাস্তার কাজ পূন:রায় করা হোক।
এ বিষয়ে সাইটে দায়িত্বে থাকা মেহেদী নামে এক এলজিইডির প্রতিনিধির কাছে কার্পেটি উঠে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংস্কার কাজের কার্পেটিং এভাবেই করা হয়। তারপরও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি, কি কারণে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে।
সড়ক সংস্কার কাজে অনিয়মের বিষয়ে জানতে এলজিইডি বান্দরবান সদর উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার বিএম মাহামুদুল হাসান এর সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন বলেন, এর আগেও রাস্তা সংস্কার কাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহারের কারণে সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আবারো যদি অনিয়ম করে থাকে তদন্ত সাপেক্ষে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এলজিইডির তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বান্দরবান সদর উপজেলার ভাগ্যকুল মাজার গেইটের ব্রীজ হয়ে আলী নগর স্কুল পর্যন্ত সড়কের সংস্কারের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক উন্নয়নকাজে ব্যয় ধরা হয় ৯৬ লাখ। কাজটি পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নু কনষ্ট্রাকশন এর লাইসেন্স এ কাজটি বাস্তবায়ন করছেন মৌলভী সুলতান আহমেদ। ২০২৫ সালের জুন মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।