গাজীপুরের জয়দেবপুর রেল জংশনের আউটার সিগন্যালে যাত্রীবাহী ট্রেন ও তেলবাহী ট্রেনের সংঘর্ষের ২৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি উদ্ধার কাজ। এ কারণে ঢাকা-জয়দেবপুর ডাবল রেল লাইনের একটিতে ট্রেন চলাচল করলেও অপরটি এখনো বন্ধ রয়েছে। এতে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের ফলে ছয়টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
এ কারণে শুক্রবার জয়দেবপুর স্টেশন দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম রেললাইনে ট্রেন চলাচল প্রায় আড়াই ঘণ্টা বন্ধ থাকে। বিকেলে রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়। এ ঘটনায় দুটি ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত ও চারজন আহত হন।
শুক্রবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সংঘর্ষের ঘটনার পর রিলিফ ট্রেনের মাধ্যমে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের পেছনের অংশের অক্ষত বগিগুলো বিকল্প ইঞ্জিনের মাধ্যমে দুর্ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। রাতভর উদ্ধার অভিযানে তেলবাহী ওয়াগনের লাইনচ্যুত পাঁচটি বগির মধ্যে তিনটি অপসারণ করে পাশের স্টেশনে সরিয়ে নেয়া হয়।
তবে, যাত্রীবাহী ট্রেন ও তেলবাহী ট্রেনের সংঘর্ষের ২৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি উদ্ধার কাজ। ফলে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ছয়টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের আশায় কমলাপুরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। দীর্ঘ অপেক্ষায় থেকে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা তাদের। রংপুরগামী যাত্রীরা জানান, ভোরে ঢাকায় ঢোকার কথা ট্রেন, তবে দুপুর ১টা পেরুলেও তার দেখা পাননি। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গ থেকে যেসব ট্রেন ঢাকায় প্রবেশ করছে, সেগুলো ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা দেরি করছে। শনিবার (৪ মে) দুপুরে জয়দেবপুর রেল জংশনে দেখা গেছে, বিভিন্ন জেলার শত শত যাত্রী ট্রেনের অপেক্ষায় করছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তারা নির্ধারিত সময়ে ট্রেন স্টেশনে না আসায় অপেক্ষা করছেন। অনেকে স্টেশন মাস্টারের কাছে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন তাদের ট্রেন কখন আসবে। কিন্তু কোন ট্রেন কখন আসবে তা তারাও সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। যাত্রীদের চাপ, দুর্ঘটনা পরবর্তী ওপর মহলের চাপে তারা দিশেহারা অবস্থা।
এক লাইনে ট্রেন চলাচলের কারণে, ঢাকা থেকে নেত্রকোনা চলাচলকারী মহুয়া কমিউটার (ট্রেন নং ৪৩-৪৪), ঢাকা-জয়দেবপুর চলাচলকারী তুরাগ কমিউটার (ট্রেন নং তুরাগ কমিউটার ১–৪) এবং ঢাকা-জামালপুর চলাচলকারী জামালপুর কমিউটার (ট্রেন নম্বর-৫১/৫২) এর শনিবারের উভয়মুখী যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা থেকে কলকাতাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা প্রায় ৩ ঘণ্টা বিলম্বিত হয়েছে বলে জানান জয়দেবপুর রেল স্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার আল ইয়াসবাহ। জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের সিগন্যাল ইন্সপেক্টর মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর থেকেই ট্রেন চলাচলে এবনরমাল টাইমিংয়ে পাস করছেন তারা। জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন থেকে শনিবার সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ময়মনসিংহগামী বলাকা এবং ঢাকাগামী বুড়িমারী এক্সপ্রেস ছেড়ে চলে গেছে। একই লাইনে দুই দিকে ট্রেন চলাচলে শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠন:
এ ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আলাদা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বরখাস্ত করা হয়েছে রেলওয়ের তিনজন কর্মচারীকে। ঘটনার পর গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, সিগন্যাল ভুল ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।