ঢাকা | সোমবার
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা

কুড়িগ্রামে জনতা ব্যাংক লিঃ ত্রিমোহনী বাজার শাখায় জালিয়াতির মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাবু কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স আইভি ট্রেডার্স কর্তৃক কুড়িগ্রাম সদর ইউএনও ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এর যৌথ স্বাক্ষরিত ২৫০০০/-(পঁচিশ হাজার) টাকা ও ৪৫০০০/-(পঁয়তাল্লিশ হাজার) টাকার দু’টি চেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অতিরিক্ত সর্বমোট ৯ লক্ষ টাকা বৃদ্ধি করে উত্তোলন ও উত্তোলনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদের হিসাব সহকারী আব্দুল হাকিম বাদি হয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন। কুড়িগ্রাম সদর থানার মামলা নম্বর ১০, তারিখঃ ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ধারাঃ ৪০৭/৪২০/৪৬৫/৪৬৮ (দি প্যানেল কোড, ১৮৬০)।

কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। মামলার বাদী ও এজাহার সুত্রে জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, মেসার্স আইভি ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী ও মামলার এজাহারে উল্লেখিত ১নং আসামি আমিনুল ইসলাম (৪৫) পিতা মৃত ময়েজ উদ্দিন, গ্রাম পলাশবাড়ী পশ্চিম পাড়া, কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রাম তিনি রাজস্ব উন্নয়নের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনও’র যৌথ স্বাক্ষর সম্বলিত ২৫ হাজার টাকার একটি চেক ( যার নম্বর CD ৬০০৪০৬৩১৯০১) গ্রহণ করলেও চেকটিতে ২৫ হাজারের আগে ৪ লক্ষ বসিয়ে মোট ৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা বানিয়ে মেসার্স আইভি ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী ও এজাহার নামীয় ২নং আসামী জুল হক সরকার বিদ্যুৎ তার নিজ চলতি হিসাব নম্বরে জমা করার জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করেন। জনতা ব্যাংক লিঃ ত্রিমোহনী বাজার শাখার ব্যস্থাপক মিতালি রানী সাহা চেকটি যাচাই করে সন্দেহ হলে উল্লেখিত একাউন্টে জমা না করে উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেন।

উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখলে চেক জালিয়াতির বিষয়টি নজরে আসে। উপজেলা প্রশাসন জানতে পারেন, মেসার্স বাবু কনস্ট্রাকশন পলাশবাড়ী, কুড়িগ্রাম এর নামে উপজেলা উন্নয়ন তহবিল নামীয় একই একাউন্টের ৪৫ হাজার টাকার অপর একটি চেকে আসামীদ্বয় একই কায়দায় ৪৫ হাজার টাকার স্থলে ৫ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা বানিয়ে উত্তোলন করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমিনুল ইসলাম বেলগাছা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জুল হক সরকার বিদ্যুৎ বেলগাছা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম ও জুলহক সরকারকে ফোন করা হলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বেলগাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বাতেন বলেন, ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা হওয়ার কথা শুনেছি। তবে গ্রপিংয়ের রাজনীতির কারণে আমার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের অসহযোগীতা এবং জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ আমার একার পক্ষে সম্ভব হবে না।

তবে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এটিএম আকতার হোসেন চিনু বলেন, ব্যাপারটি খতিয়ে দেখে সত্যতা পেলে আওয়ামী লীগের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে অভিযুক্ত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অপরদিকে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মমিনুল ইসলাম জানান, বেলগাছা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক জুলহক সরকার বিদ্যুৎ এর বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা হওয়ার খবর এই মাত্র আপনার নিকট থেকে জানতে পারলাম। ব্যাপারটি খতিয়ে দেখে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বেলগাছা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়কের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন ও থানায় মামলা হওয়া খবর এইমাত্র শুনলাম। স্বেচ্ছাসেবক লীগে অপরাধী ও অপকর্মকারীদের কোন স্থান নেই। আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মুসফিকুল আলম হালিম কে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন