ঢাকা | সোমবার
১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমার থেকে ছোড়া মার্টারশেলের আঘাতে নারীসহ নিহত ২

মিয়ানমার থেকে ছোড়া মার্টারশেলের আঘাতে নারীসহ নিহত ২

মিয়ানমারের থেকে ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে আসমা খাতুন (৫৫) নামে এক বাংলাদেশী নারী ও রোহিঙ্গা শ্রমিক নবী হোসেন (৭০) নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে এক শিশু। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের জলপাইতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আসমা খাতুন তুমব্রু জলপাইতলী এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাদশা মিয়ার স্ত্রী। নিহত রোহিঙ্গা শ্রমিক বালুখালী ক্যাম্পের ধলু হোসেন এর ছেলে বলে জানা যায়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মিয়ানমারের ওপার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের বিষ্ফোরিত অংশ জলপায়তলী এলাকায় এসে পড়ে। এসময় মর্টারশেলের বিষ্ফোরিত অংশের আঘাতে বাংলাদেশী নাগরিক আসমা খাতুন ও রোহিঙ্গা শ্রমিক নবী হোসেন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ ঘটনায় আহত হয় এক শিশু। আহত শিশুকে উদ্ধার করে নিকটস্থ এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেও মারা যায়। এদিকে এ ঘটনার পর থেকে ঐ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনেকেই প্রাণের ভয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র নিরাপদে চলে যাচ্ছে। এদিকে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বিজিবি ও পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ১৫ এর টিম কাজ করছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে র‌্যাব ১৫ এর উপ অধিনায়ক আবু সালাম চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে এক বাংলাদেশী মহিলা ও এক রোহিঙ্গা শ্রমিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অপর এক শিশু। আহত শিশুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকাবাসীর জান মালের নিরাপত্তার স্বার্থে বিজিবি, পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের সদস্যরাও কাজ করে যাচ্ছে বলেন জানান এই কর্মকর্তা।

মূলত, দীর্ঘদিন ধরে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ক্যাম্প দখল নিয়ে আরাকান আর্মি ও সামরিক জান্তা বাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলে আসলেও গতকাল থেকে দুগ্রুপের মধ্যে শুরু হয় তুমুল লড়াই। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি সদস্যের লাগাতার আক্রমনে প্রতিহত হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় দেশটির সামরিক জান্তা বাহিনীর সদস্যরা। শুধু তাই নয় জান্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রাণ বাঁচতে অস্ত্র নিয়ে একের পর এক পালিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। এ পর্যন্ত সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ৯৫ সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, রবিবার সারারাত নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ঢেকিবনিয়া অংশে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। চলে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত। এরপর ঘন্টা দুই এক কোন গোলাগুলির শব্দ শোনা না গেলেও বেলা গড়াতেই শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ। বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে পড়ে পুরো ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকা। আরাকান আর্মি ও সামরিক জান্তা বাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে তাদের ছোড়া মর্টারশেল, রকেট লাঞ্চারসহ গুলি এসে পড়ে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বসতঘরের উপর। শুধু তাই নয় এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী নাগরিক। এদিকে রবিবার রাতেই জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পরাস্থ করে তুমব্রু সীমান্তের রাইট ক্যাম্পটি পুরোপুরি দখলে নিয়ে নেয় বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির সদস্যরা। এতেই বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যরা থেমে থাকেনি। এরপর আক্রমন চালায় ঘুমধুম সীমান্তের ঢেকিবনিয়ার মূল ক্যাম্পে। সে ক্যাম্পটিও দখলে নিতে একের পর এক মর্টারশেল নিক্ষেপ, রকেট লাঞ্চার বিষ্ফোরনসহ ব্যাপক গোলাগুলি চালাচ্ছে আরাকান আর্মির সদস্যরা। অপরদিকে ক্যাম্প দখলে রাখতে পাল্টা আক্রমন চালাচ্ছে সামরিক জান্তা বাহিনীর সদস্যরাও। শুধু তাই নয় হেলিকপ্টার থেকেও নিক্ষেপ করা হচ্ছে গোলাবারুদ ও মর্টারশেল। স্থানীয়রা ধারণা, তুমব্রু রাইট ক্যাম্পের মত জান্তা বাহিনীদের বিতাড়িত করে ঘুমধুম ঢেকিবনিয়া ক্যাম্পটিও দখলে নেবে মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির সদস্যরা। এদিকে এই তুমুল যুদ্ধে দু’গ্রুপের বেশ কিছু সৈন্য নিহত ও আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

সীমান্ত উত্তেজনার বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তেজনা থাকায় সাময়িক সময়ের জন্য সীমান্তবর্তী ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। নিরাপত্তা জনিত কারণে জনগণের যাতায়াত সীমিত করণের পাশাপাশি ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বেশ কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ঝুকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে জনপ্রতিনিধিদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন