ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাবনায় মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের দশম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

পাবনায় মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের দশম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

পাবনায় মহানায়িকা সুচিত্রা সেন এর দশম মৃত্যুবার্ষিকী শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের হেমসাগর লেনে মহানায়িকার স্মৃতি বিজড়িত পৈত্রিক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের আবক্ষ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

এ সময় তার আত্মার শান্তি কামনায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. রামদুলাল ভৌমিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ মধুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, পরিষদের সহ-সভাপতি ফরিদুল হক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট পাবনার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাজহার প্রমুখ। পরিষদের সদস্য চুমকি রাণি, আরটিভি পাবনা প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক এস আলম, সদস্য মাহবুবুল আলম লিটন, বিলব ভৌমিক প্রমুখ।

সভায় দীর্ঘ ১০ বছরেও বাড়িটিতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাবনার সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

মহা নায়িকা সুচিত্রা সেন ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হীমসাগর লেনের একতলা পাকা পৈতৃক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের শৈশব-কৈশোর কেটেছে। ১৯৪৭ সালে বর্ধিষ্ণু শিল্পপতি পরিবারের সন্তান দিবানাথ সেনকে বিয়ে করেন সুচিত্রা। বিয়ের পরে ১৯৫২ সালে ‘শেষ কথায়’ সিনেমা দিয়ে রূপালি পর্দায় নায়িকার ভূমিকায় প্রথম আত্মপ্রকাশ হয় তার। পাবনার রমার নাম বদলে হয় সুচিত্রা। আর তার পরেরটা শুধুই ইতিহাস। মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে জুড়ি বেঁধে সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে উপহার দিয়েছিলেন একের পর এক সুপারহিট সিনেমা। বস্তুত সুচিত্রার জীবনের প্রথম হিট ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতেই প্রথম দেখা মেলে বাংলা চলচ্চিত্রের চির রোমান্টিক এই জুটির। উত্তম কুমার ছাড়াও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অশোক কুমার, বসন্ত চ্যাটার্জীর সহ বেশ কিছু নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে অসাধারণ কিছু সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি।

সুচিত্রা সেন ‘দেবী চৌধুরানী’ ছবিতে রঞ্জিত মল্লিকের স্ত্রী হিসেবেও অভিনয় করেছেন। ‘শাপ মোচন’, ‘হারানো সুর’, ‘পথে হল দেরি’, ‘ইন্দ্রাণী’, ‘সপ্তপদী’, ‘গৃহদাহ’, ‘হার মানা হার’, ‘হসপিটাল’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘সাগরিকা’, ‘দত্তা’ প্রভৃতি সিনেমায় সুচিত্রা সেন তার অসাধারণ প্রতিভার সাক্ষর রেখেছিলেন। বাংলার গণ্ডি ছাড়িয়ে হিন্দি ছবির জগতেও সুচিত্রা করেছিলেন বেশ কিছু অসাধারণ সিনেমা। ১৯৫৫ তে ‘দেবদাস’ সিনেমায় দিলীপ কুমারের বিপরীতে পার্বতীর চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এ ছবিতে সুচিত্রা সেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেন। এরপর ‘মমতা’ এবং ‘আঁধি’ সিনেমার জন্য ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারের মাধ্যমে সুচিত্রার অভিনয় প্রতিভার প্রতি সম্মান জানিয়েছিল বলিউড।

কোনো এক অজানা কারণে প্রায় ৩৬ বছর তিনি ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। কলকাতায় একাকী থাকতেন বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে। স্বেচ্ছা নির্বাসনে গিয়ে রহস্যময়ী ছিলেন আমৃত্যু। শুধু কথা বলতেন মেয়ে মুনমুন সেন ও নাতনি রাইমা ও রিয়া সেনের সঙ্গে। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মশ্রী পান। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাংলাবিভূষণ সম্মাননা দেয়া হয় তাকে। ২০০৫ সালে সুচিত্রা সেনকে ভারতের চলচ্চিত্র অঙ্গনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব করা হলে সুচিত্রা সেন দিল্লীতে গিয়ে ঐ সম্মান গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সুচিত্রা সেন ১৯৬৩ সালে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান।

সুচিত্রা সেন উপমহাদেশের গর্ব উল্লেখ করে পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন, পাবনায় পৈত্রিক ভিটায় সুচিত্রা সেনের স্মৃতি সংগ্রহশালা হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, তার প্রয়াণের দশ বছর পার হলেও এখানে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রয়াণ দিবসে আমরা দাবি জানাই অতি দ্রুত যেন বাড়িটিতে সংগ্রহশালা করা হয়। তা না হলে পাবনার সাংস্কৃতিক কর্মীরা আবারও আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।

এসময় বক্তারা মহানায়িকার পৈত্রিক বাড়িটি আর্কাইভ তৈরির কাজ দ্রুত করতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর জোর দাবী জানান।

সংবাদটি শেয়ার করুন