বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি শুধু একটি ভৌগোলিক মানচিত্র নয়—এটি একটি বিশ্বাস, একটি সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। বাঙালি জাতি তার আত্মপরিচয়ের জন্য লড়েছে ভাষার জন্য, স্বাধীনতার জন্য এবং সর্বোপরি একটি অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য। এই আদর্শিক যাত্রার পেছনে রয়েছে একজন মহীরুহ—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে প্রজন্ম বুক পেতে দিয়েছিল, তার নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বাংলাদেশ গঠনে ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগ ছিল বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম সংগঠিত ছাত্রশক্তি। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ—প্রতিটি বাঁকে ছাত্রলীগ ছিল অগ্রভাগে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে। এই সংগঠন শুধু ছাত্রদের সংগঠন নয়, এটি এক আদর্শিক প্রস্তুতিমঞ্চ। ছাত্রলীগ মানে শেখ মুজিবের বীজতলা।
শেখ হাসিনা: বঙ্গবন্ধুর কন্যা, অসাম্প্রদায়িক চেতনার অগ্রদূত
বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশ এক অন্ধকার সময় অতিক্রম করে। সেই আঁধারের বিরুদ্ধে একা এক সংগ্রামী নারীর নেতৃত্বে আবার জেগে ওঠে জাতি। তিনি শেখ হাসিনা। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর কন্যা নন, তিনিই আজ সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক ও বাহক।
শেখ হাসিনা যখন ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন, তখন দেশজুড়ে মৌলবাদ, সামরিক স্বৈরতন্ত্র এবং সাম্প্রদায়িক উন্মাদনার দাপট। সেই সময় তিনি শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণ। ১৯৯৬ থেকে শুরু করে আজ অবধি তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন—বাংলাদেশ কারও ধর্মীয় গোঁড়ামির শিকার হবে না, এটা অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা হয়ে থাকবে।

ধর্মের অপব্যাখ্যায় বিভ্রান্তি ছড়ানোর ষড়যন্ত্র
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মকে ব্যবহার করে নানা অপশক্তি বারবার মাথা তুলেছে। একটি গোষ্ঠী ধর্মকে ঢাল বানিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তারা কোরআনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তরুণদের জঙ্গিবাদে উৎসাহিত করছে, নারীর অধিকার খর্ব করতে চায়, সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলছে।
এই মৌলবাদী শক্তিগুলোর উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার—বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানো। তারা চায় না এখানে রবীন্দ্রনাথ থাকুক, বিজয়ের গান বাজুক, মেয়েরা শিক্ষিত হোক, কারও ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকুক।
সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ ও রাজনীতিতে বিষাক্ত আগাছা
রাজনীতির মাঠে এসব মৌলবাদী শক্তি যখন প্রতিষ্ঠিত দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়, তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত জোট মৌলবাদকে রাজনীতির অংশ বানিয়েছে। তারা শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরকে “নাস্তিকতার আসর” বলে প্রচার চালিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করতে চেয়েছে।
হেফাজতের মতো ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলি যখন কওমি শিক্ষাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে দাঁড়ায়, তখনই বুঝতে হয়—দেশের ভবিষ্যৎ একটা সংকটের মুখে।
শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগের লড়াই—আলো বনাম অন্ধকার
এই অন্ধকারের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছেন শেখ হাসিনা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন—“বাংলাদেশ কারও ব্যক্তিগত ধর্মীয় চিন্তার দ্বারা নয়, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলবে।”
তিনি নারীদের শিক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়েছেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিয়েছেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের উৎসবে নিজে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন, জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে সফলভাবে দমন করেছেন। এগুলো শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, এগুলো আদর্শিক অবস্থান।
ছাত্রলীগও আজ সেই আদর্শিক লড়াইয়ের অংশ। দলীয় রাজনীতির বাইরেও ছাত্রলীগ মাঠে-ময়দানে দাঁড়িয়েছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে। ব্লগার হত্যার বিরুদ্ধে, সংখ্যালঘুদের মন্দিরে হামলার বিরুদ্ধে, ধর্ম নিয়ে গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সবসময় সোচ্চার থেকেছে।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বিপদ এখনো আছে
আজ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র—সবই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তব হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বসভায় আত্মবিশ্বাসী জাতি। তবুও এই সাফল্যের যাত্রায় সবচেয়ে বড় বাধা—মৌলবাদ, গুজব, ধর্মের অপব্যাখ্যা।
উপসংহার: অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে ফিরে যেতে হলে শেখ হাসিনার পথেই হাঁটতে হবে
আমাদের বুঝতে হবে—ধর্ম আর রাজনীতির অপবৈধ জোট বাংলাদেশের জন্য মরণফাঁদ। যারা ধর্মের নামে উগ্রতা ছড়ায়, তারা ইসলাম বা কোনো ধর্মের বন্ধু নয়। শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ আজ শুধু রাজনৈতিক শক্তি নয়—তারা মানবতার, প্রগতির, সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক।
আমরা যদি সত্যিকারের বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে চাই, তাহলে ধর্মের অপব্যাখ্যাকারী গোষ্ঠীকে রুখতেই হবে।
এখানেই ছাত্রলীগের ভূমিকা আরও স্পষ্ট, আরও দরকারি।
আজ ২০২৪ সালের বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে এক সংকট ও সম্ভাবনার সন্ধিক্ষণে। আসুন, বিভ্রান্তির অন্ধকার সরিয়ে আমরা আবার মুক্তিযুদ্ধের আলোয় ফেরত যাই। আসুন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক চেতনার পতাকা আবার উঁচু করি।
লেখক মেজবাউল ফেরদৌস স্বচ্ছ
কার্যকরী সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।




