নীলফামারীর সৈয়দপুরে যাত্রীবেশে উঠে চেতনানাশক ওষুধের মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক রমজান আলী (৪৬) হত্যায় ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার মো: গোলাম সবুর পিপিএম-সেবা এর নির্দেশে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারসহ পুলিশের নানা কৌশলের মাধ্যমে জড়িত তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ২৭ অক্টোবর ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আহমদ উল্লাহ হক প্রধানের নেতৃত্বে সৈয়দপুর থানা পুলিশ সদস্যরা। গ্রেফতারকৃতরা হলো কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হোকডাঙ্গা কুমারপাড়ার (জোবেরবাজার) মৃত. আজিজার রহমানের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪৩), পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির গুইমারা থানার হাফছাড় এলাকার বাদশা মিয়ার ছেলে মো. ফিরোজ (৩৬) এবং গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার পাবুর এলাকার মৃত. হাফিজের ছেলে মো. দুলাল (৪৫)। তাদেরকে তিনদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রবিবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে আদালতের মাধ্যমে নীলফামারী জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মৃত. রমজান আলীর ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি গত শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রংপুর মহানগরীর সাতমাথা এলাকার একটি অটোরিকশা গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
মামলার সূত্র মতে পুলিশ জানিয়েছে, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের আলাদিপাড়ার মৃত.হবিবর রহমানের ছেলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক রমজান আলী ঘটনার দিন গত ৩১ আগষ্ট সকাল ৬ টায় তিনি প্রতিদিনের মতো অটোরিকশা চালানোর উদ্দেশ্যে কামারপুকুর ইউনিয়নের নতুন আবাসন প্রকল্প এলাকার বাড়ি থেকে বের হন। পরে কামারপুকুর বাজারের আবেদ আলীর (গুরু) রিকশা গ্যারেজ থেকে অটোরিকশা নিয়ে বের হন। পরবর্তীতে সকাল ১০টার দিকে ওই অটোরিকশা চালক অচেতন অবস্থায় জনৈক ব্যক্তির রিকশাযোগে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর পরিবারের লোকজন তাঁকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কজনক হওয়ায় দ্রুত তাঁকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পরদিন ১লা সেপ্টেম্বর ভোরে মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মোছা. শরিফা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে ওইদিনই সৈয়দপুর থানায় একটি মামলা
করেন। এ মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সৈয়দপুর থানার উপ-পরিদর্শক আহমদ উল্লাহ হক প্রধান। পরে তিনি ক্লুলেস হত্যা মামলাটির তদন্তে নামেন। তিনি (তদন্তকারী কর্মকর্তা) প্রায় দুই মাস সৈয়দপুর শহর ছাড়াও পার্শ্ববতী রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা শহরের বিভিন্ন স্থানের একাধিক প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করেন। একই সাথে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অটোরিকশা চালক রমজান আলীকে চেতনানাশক খাইয়ে অজ্ঞান করে তাঁর অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। এরপর তাদের গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করে পুলিশ। পরবর্তীতে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গত ২৭ অক্টোবর তদন্তকারী কর্মকর্তা সৈয়দপুর থানার এস আই আহমদউল্লাহ হক প্রধানের নেতৃত্বে এসআই আহসান হাবিব, এএসআই আবু তালেবকে নিয়ে ঢাকায় যান। ওইদিন রাতেই ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে রমজান আলীকে চেতনানাশক খাইয়ে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ও হত্যার ঘটনায় জড়িত তিন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন তারা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আহমদউল্লাহ হক প্রধান বলেন, এ মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়া আসামীরা সৈয়দপুর থেকে এর আগেও একাধিক অটোরিকশা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। পরে তাদেরকে ২৯ অক্টোবর নীলফামারী আদালতে পাঠানো হয়। গত ২ অক্টোবর আদালতে শুনানী শেষে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলে জানান তিনি। রিমান্ড শেষে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম ক্লুলেস মামলার তিন আসামীকে গ্রেফতার ও ছিনতাইকৃত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।