শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
উলানিয়া আহমদিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসা

মেহেন্দিগঞ্জে মাথার ওপরে মোবাইল টাওয়ার, ঝুঁকিতে ৭শ শিক্ষার্থী

মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার রেডিয়েশনের ঝুঁকিতে মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া আহমদিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার প্রায় ৭শ শিক্ষার্থী। মাদ্রাসার এক তলা ভবনে মোবাইল নেটওয়ার্কের টাওয়ার স্থাপনে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকিতে আছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীসহ ওই এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা। স্থানীয়রা মৌখিকভাবে প্রতিবাদ করলেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং টাওয়ার স্থাপনকারীদের টনক নড়েনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, উলানিয়া আহমদিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার একতলা ভবনের উপরে মোবাইল নেটওয়ার্কের টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। এক তলা ওই ভবনের নিচেই পাঠদান হচ্ছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের। যেখানে ১২-১৩ বছরের প্রায় ৩শ শিক্ষার্থী জীবন ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত ক্লাস করছে। অন্যদিকে একই প্রতিষ্ঠানের পাশের ভবনে আরও ৪শ শিক্ষার্থীও নিয়মিত ক্লাস করছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদ্রাসা ভবনে মোবাইল নেটওয়ার্কের টাওয়ার স্থাপনে নেওয়া হয়নি কোন রকম অনুমতি। অভিযোগ আছে, মাদ্রাসা সুপার মাওলানা খলিলুর রহমান মোটা অঙ্কের অর্থ লোভে টাওয়ার স্থাপনে অনুমতি দিয়েছেন ও টাওয়ার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এই টাওয়ার স্থাপন করেছে। এই টাওয়ার স্থাপনে রেডিয়েশনের ক্ষতিকর প্রভাবে ওই মাদ্রাসার কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী, এলাকার মানুষের হৃদ্‌রোগ, ক্যান্সারসহ শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন ঝুঁকির মাত্রা অধিক যা বিশেষজ্ঞদের একাধিক গবেষণায়ও উঠে এসেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, টাওয়ার রেডিয়েশনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়ে শিশুরা। বাচ্চাদের শরীরে ফ্লুইড বেশি থাকার কারণে তারা বেশী আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শরীরে সেলগুলো একে অন্যের সাথে যোগাযোগে দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত করে এক্সটারনাল রেডিয়েশন। ফলে ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকিও তৈরি হয়। শিশুদের অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও এ রেডিয়েশন ভূমিকা রাখার আশঙ্কা আছে। এর বাইরেও যে কারো মধ্যেই জেনেটিক পরিবর্তন, অবসন্নতা, লিউকেমিয়াসহ আরও কিছু রোগের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে রেডিয়েশনের কারণে।

আরও পড়ুনঃ  ১২ জুন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ল

এছাড়াও মাথাব্যথা, হৃদরোগসহ, ঘুম ঘুম ভাব, নিদ্রাহীনতা কাজের ব্যাঘাত ঘটাসহ অনেকগুলো সমস্যার কথা প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারতের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারের রেডিয়েশন চড়ুই, মৌমাছি, শালিক, টিয়া, টুনটুনি সহ আমাদের পরিচিত অনেক পাখির জন্য খুবই ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। যেসব বাসা বাড়ির ছাদে টাওয়ার আছে তার আশপাশের সবাই যেমন ঝুঁকিতে পড়ে তেমনি কাছাকাছি গাছের ফল ও পাখিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।

মাদ্রাসা সুপার মাওলানা খলিলুর রহমান দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান,  মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারটি টেলিটক কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি প্রায় ৮ বছর আগে। আমি ও আমি ও তৎকালীন মাদ্রাসা সভাপতি কাজী শামসুল আলম এই অনুমোদন প্রদান করি। ২০১৮ সালের দিকে প্রথম চুক্তি হয় প্রতি বছর ৪২,০০০ টাকা করে ৫ বছরের জন্য। এই মেয়াদ শেষে ২০২২ সালে চুক্তি নবায়ন করা হয় প্রতি বছর ৫৮,০০০ টাকা করে।

তিনি জানান, টাওয়ার স্থাপনে কোন ক্ষতি হয়েছে এমন খবর আমি জানি না। আপনার কাছে (এই প্রতিবেদকের) এর ক্ষতির বিষয়ে জেনেছি। যেহেতু ক্ষতি হবে মোবাইল কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে এই টাওয়ার অপসারণের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

মাদ্রাসা সভাপতি খোরশেদ আলম ভুলু দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান, টাওয়ারটি স্থাপনের চুক্তি ও নবায়নের সময় আমি দায়িত্ব ছিলাম না। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর হলে টাওয়ার সড়িয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। 

সংবাদটি শেয়ার করুন