ঢাকা | মঙ্গলবার
১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে শর্টসার্কিট থেকে বাড়ছে অগ্নিদুর্ঘটনা

চট্টগ্রামে শর্টসার্কিট থেকে বাড়ছে অগ্নিদুর্ঘটনা

চট্টগ্রামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। জেলায় প্রতিদিন গড়ে দুটি করে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও।

চট্টগ্রামে মিরসরাইয়ে বিগত ৫ বছরে ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ২শ ৯৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে।

পাঁচ বছরে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে ৮৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া রান্না ঘরের চুলা থেকে আগুন লেগেছে ৩৪ বার ও বিড়ি সিগারেটের আগুন থেকে ২৩ বার আগুনের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ২০২২ সালে। ওই বছর ৭২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে ২০১৮ সালে। ওই বছর বৈদ্যুতিক শটসার্কিটে আগুন লেগেছে ২২টি স্থানে। এতে ক্ষতি হয় প্রায় ৩৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে বৈদ্যুতিক সংযোগ লাইন থেকে অতিরিক্ত সংযোগ দেওয়ার ফলে ওভারলোড হয়ে শর্টসার্কিট থেকে বাসাবাড়িতে আগুনের ঘটনা ঘটে। এর বাইরে পুরোনো বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সংস্কার না করার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া মানহীন নকল বৈদ্যুতিক কেবল ব্যবহারের কারণেও অধিকাংশ শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।

মিরসরাই ফায়ার সাভির্স অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে উপজেলায় ৪৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এগুলোর মধ্যে শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে ২২ বার। রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ৮টি। ৪৬টি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি হয় প্রায় ৪৭ লাখ ৫ হাজার টাকা।

২০১৯ সালে ৬০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ৬০ এর মধ্যে ১৮টি ঘটে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে। ৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে রান্নাঘরের চুলার কারণে। ৬০টি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি হয় প্রায় ৫২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।

২০২০ সালে উপজেলায় ৫১টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এগুলোর মধ্যে ১১টি আগুনের ঘটনার সূত্রপাত হয় বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে। ৯টি আগুন লাগে রান্নাঘরের চুলায়। এতে আনুমানিক ক্ষতি হয় প্রায় ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

২০২১ সালে উপজেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ৬৫টি। বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় ২০টি স্থানে। চুলা থেকে আগুন লাগে ৪টি বাড়িতে। এছাড়া বিড়ি সিগারেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় ১০টি স্থানে।

২০২২ সালে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় আগুন লাগে ৭২টি স্থানে। এতে ১৭টি স্থানে আগুন লেগেছে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে। ১৩টি স্থানে আগুন লেগেছে বিড়ি সিগারেটের কারণে। এছাড়া রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুন লাগে ৫টি স্থানে। ৭২টি অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক ক্ষতি হয় ৩৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।

আরো জানা গেছে, ২৯৪টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ১শ’টি আগুন লাগে বসতঘর ও রান্না ঘরে। ২১টি আগুন লাগে গোশালা ও খড়ের গাদায়। এছাড়া ১২টি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আগুন লাগার সাথে সাথে ঘরের লাইন বন্ধ করে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। লাইন বন্ধ করে দিয়ে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিতে হবে।

এদিকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রত্যেক বছর একাধিক অগ্নিকাণ্ড নির্বাপক মহড়ার আয়োজন করে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানে এই মহড়ার আয়োজন করা হয়।

বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সুত্রপাত কেন বেশি হয় এমন প্রশ্নের জবাবে বারইয়ারহাট পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম আবু জাফর বলেন, সাধারণত অসর্তকতার কারণে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কমাতে হলে আমাদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি ব্যবহার করতে হবে মানসম্মত বৈদ্যুতিক সামগ্রী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারী বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত কমাতে হলে আমাদের ঘরের সুইচ ও মাল্ট্রিফ্লাগ ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে কোন সুইচে ত্রুটি দেখা গেলে দ্রুত সারিয়ে ফেলা উচিত। এছাড়া বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুন লাগলে দ্রুত লাইন বন্ধ করে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন