ঢাকা | সোমবার
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোপালগঞ্জে আওয়ামীলীগের নেতা পপা বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগ

গোপালগঞ্জের পপা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

একজন এতিমসহ একাধিক মানুষকে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে প্রায় এক কোটি টাকা নিয়ে চাকুরি না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গোপালগঞ্জ উলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুল কমিটির সভাপতি,আওয়ামীলীগের দাপুটে নেতা পপা চৌধুরী।

ভুক্তভোগী সেলিম মোল্লা. বলেন, আমি একজন এতিম মানুষ। আমার বাবা মারা গেছে ৭ বছর আগে। লেখাপড়া জানি। সরকারি চাকুরির জন্য অনেকের কাছে ধর্না ধরেছি, কিন্ত চাকুরি মেলেনি। বেকারত্ব জীবনযাপন করছি। সংসারেও খুব টানাটানি। আমার এমন অবস্থা দেখে প্রতিবেশি উলপুর জমিদার বাড়ীর উত্তরসুরি মৃনাল কান্তি রায় ওরফে পপা চৌধুরী আমার পাশে এসে দাড়ালেন। বললেন, লেখাপড়া যেহেতু জানিস সেহেতু দেখি তোরে একটা চাকুরি দেয়া যায় কিনা। তুইতো জানিস আমি স্থানীয় পিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। সামনে আমার স্কুলে জনবল নিয়োগ করবো কিছু টাকা পয়সা ম্যানেজ কর, তোরে অফিস সহকারী পদে চাকুরী দিব। পপা চৌধুরীর কথার উপর আস্থা রেখে চাকুরি পাওয়ার আশায় দেড় বছর আগে আমার শেষ সম্বল ২বিঘা ফসলি জমি বিক্রি করে পপা চৌধুরীকৈ নগদ ১০লাখ টাকা দিয়েছি। একই কথা বলে আরো একাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা নিয়েছেন।

গত ১৯সেপ্টেম্বর স্কুলে জনবল নিয়োগ দিয়েছেন ঠিকই কিন্ত, আমাদের কাউকেই তিনি চাকুরী না দিয়ে অন্যদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে তাদের চাকুরী দিয়েছেন। এরপর আমরা সবাই টাকা ফেরৎ চাইলে সে আজ না কাল বলে ঘুরাচ্ছেন কিন্ত টাকা দিচ্ছেন না। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে আমরা তার বাড়ীর প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছি। কথাগুলো বলছিলেন, সদর উপজেলার উলপুর গ্রামের চাকুরী বঞ্চিত ভুক্তভোগীরা।

উলপুর গ্রামের উত্তরপাড়ার শিপন মোল্লা বলেন, পপা রায় চৌধুরীর সাথে কথা বলেই আমি আট লক্ষ বিশ হাজার টাকা দিয়েছি তারই এক কর্মচারির নিকট নিরাপত্তা প্রহরীর চাকুরী বাবদ। আমাকে চাকুরীটা না দিয়ে আরো বেশি টাকা খেয়ে চাকরীটা দিল কুদ্দুস খানকে। আমি আমার টাকাগেুলো ফেরত নেওয়ার জন্য পপা রায় চৌধুরীর উলপুরের জমিদার বাড়িতে যাই ওখানে তাকে না পেয়ে তার গোপালগঞ্জের বাসায় যাই, সেখানেও তাকে পাইনি। আমি আমার টাকা গুলো ফেরৎ চাই, সেই সাথে এই অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবি জানাই।
ভুক্তভোগী মাসুম মোল্লা বলেন, আমি অফিস সহকরী পদের একজন প্রার্থী ছিলাম। আমি ও আমার বাবা পপা রায় চৌধুরীর সাথে কথা বলে তার উলপুরের জমিদার বাড়ি গিয়ে ৪ লক্ষ দিয়ে আসি, চাকরিটা হলে তাকে আরো ছয় লক্ষ টাকা দিতে হবে কিন্তু সে আমাকে চাকুরীটা না দিয়ে চাকুরিটা দিল রাশেদ শেখ নামক অন্য একজনেকে। শুনেছি তিনি ঐ প্রার্থীর নিকট হতে বার লক্ষ টাকা নিয়েছেন। মাসুম মোল্লা আরো বলেন, পপা রায় চৌধুরী যাদের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে, সকলের সাথে সে প্রতারনা করেছে। আমরা এই আবৈধ নিয়োগ বাতিল চাই সেই সাথে আমাদের টাকা ফেরৎ চাই।

উলপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম বলেন, আমি বিদ্যালয়ের পরিছন্ন কর্মী হিসাবে পরিক্ষা দিয়েছিলাম আমি পরিক্ষাতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলাম, বিদ্যালয়ের সভাপতি পপা রায় চৌধুরী পরিক্ষার সময় হলে এসে তিনি আমাকে বলেছিল তোর হাতের লেখা অনেক সুন্দর সমস্যা নেই তোর চাকরিটা হবে। সে আমার কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছে। সে আরো বলেন, পপা রায় চৌধুরী আমাকে বলেছিল তুই ছাত্রলীগের কর্মী তুই আমাদেরই লোক এই কারণেই তোর কাছ থেকে বিদ্যালয়ের খরচ-খরচা বাবদ ২ লক্ষ টাকা নিলাম।
এলাকাবাসি ও ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করে বলেন, এই নিয়োগ পরিক্ষা শুধুই লোক দেখানো। মূলত এই নিয়োগ দেখিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এলাকাবাসীর একটাই দাবী ভুক্তভোগীদের নেওয়া টাকা ফেরত ও অবৈধ্য নিয়োগ বাতিল করতে হবে।

বিষয়টি অস্বীকার করে উলপুর পিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও আওয়ামীলীগ নেতা মৃনাল কান্তী রায় পপা চৌধুরী বলেন, উলপুর এলাকার কিছু লোকজন সামাজিভাবে আমার ভাবমুতি ক্ষুন্ন করার জন্য মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে বেড়াচ্ছে। চাকুরি দেওয়ার কথা বলে আমি কোন মানুষের কাছ থেকে টাকা নেইনি। তবে, তিনি এ কথাও বলেছেন, টাকা দিলেই চাকুরি হয়না।

সংবাদটি শেয়ার করুন