ধরলার তীব্র ভাঙনে মায়ের কবর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েন ছেলে বদিরুজ্জামান মিয়া (৫৮)। গত এক মাস আগে ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে বাড়ী ভিটা ১৬ শতক জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ঠাই নেন আবাসনের মাঠে। সেখানে দুইটি ছোট ঘর তোলে অতি কষ্টে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। এদিকে শেষ স্মৃতি মায়ের কবরটি সেটিও তিন-চারদিন আগে আগ্রসী ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ছেলে বদিরুজ্জামান মিয়া বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বদিরুজ্জামান মিয়ার বাড়ী ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর-গোরকমন্ডল গ্রামের মৃত শাহজাহান আলীর ছেলে।
শনিবার সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, গত এক থেকে দেড় মাস আগে উপজেলার চরগোরকমন্ডল এলাকার ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে হাফ কিলোমিটার গ্রামীন সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সেই সাথে শতশত বিঘা ফসলি জমি ও ১৫ থেকে ২০ পরিবারে বসত ভিটে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ভাঙন রোধের জন্য ৬ হাজার জিওব্যাগ দিয়েও ভাঙন ঠেকাতে পাড়ছে না। বদিরুজ্জামান মিয়া জানান বাড়ী-ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হলেও আমার কোন কষ্ট হয়নি। কিন্তু আমার মায়ের শেষ স্মৃতি হিসাবে কবরটি ছিল। সেই কবরটিও কেড়ে নিয়েছে আগ্রাসী ধরলা নদী। আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে বাহে ! সেই সাথে ধরলার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তিনি তার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবী জানান।
স্থানীয় শাহালম মিয়া জানান, ধরলা নদী ভাঙতে ভাঙতে আমার বাড়ীর কাছেই এসেছে। নদী থেকে আমার বাড়ীর দুরত্ত মাত্র ৭ ফিট। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে কিছু দিনের মধ্যে আমার বাড়ী-ভিটাও গিলে খাবে আগ্রাসী ধরলা। তিনি আরও জানান, কর্তৃপক্ষ ৬ হাজার জিওব্যাগ দিয়েছে। কিন্তু ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না। তাই তিনিসহ এলাকাবাসী দ্রুত ভাঙন রোধ করার জন্য স্থায়ী নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোড় দাবী জানিয়েছেন।
চর-গোরকমন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়াজ উদ্দিন জানান, চর-গোরকমন্ডল এলাকার ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে ইতো মধ্যে ১৫ থেকে ২০ টি পরিবার ও হাফ কিলোমিটার সড়কসহ শতশত ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষকে জানানো পর ৬ হাজার জিওব্যাগ দিয়েছেন। কিন্তু ভাঙন রক্ষা করা যাচ্ছে না। তিনি আরও জানান, হুমকির মুখে ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মুজিব কেল্লার ভবন, স্কুল, মাদ্রসাসহ ওই এলাকার ৮০০ পরিবার। ভাঙন রোধের জন্য কর্তৃপক্ষের সৃ-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইসমত ত্বোহা জানান, চর-গোরকমন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙন ঠেকাতে ইতোমধ্যেই ৬ হাজার জিওব্যাগ ফেলানো হয়েছে। আসলে ওই এলাকায় ভাঙন রোধ করার জন্য বড় প্রকল্প ছাড়া শুধুমাত্র জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করা সম্ভব না। ভাঙন রোধে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
আনন্দবাজার/শহক