শোকাবহ মাস আগষ্টের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ভক্তদের উপচেপড়া ভীড়ে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল তীর্থস্থানে রুপ নিয়েছিলো। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পযন্ত মহাননেতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে টুঙ্গিপাড়ায় আসা-যাওয়া অগনিত মানুষের পদচারনায় মুখোরিত হয়ে উঠেছিলো বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেস্কটি।
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানাতে টুঙ্গিপাড়ায় আসা দেশি-বিদেশী মুজিবভক্ত-দর্শনার্থী, শিক্ষক- শিক্ষার্থী, দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবি হাজার হাজার মানুষের আসা যাওয়ায় পরিনত হয় মিলন মেলায়।
মুজিবভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখোরিত সুধু সমাধিস্থলই নয়, শেখ রাসেল শিশু পার্ক ও পাটগাতি সেতুসহ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত সকল স্থানগুলোতে ছিলো মানুষের উপচেপড়া ভীড়।
নিজ জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় বাবা মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সটি পাল্টে দিয়েছে টুঙ্গিপাড়ার চিত্র।
সমাধিসৌধটি আসে এখানে। মুজিবভক্ত-দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর থাকে টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন এলাকা। সমাধিসৌধ, সহ ঘিরে পর্যটন এলাকায় রূপ নিয়েছে টুঙ্গিপাড়া।
চারপাশ সবুজ গাছপালায় ঘেরা গ্রাম টুঙ্গিপাড়ার বাঘিয়ার নদী পাড়ে লাল সিরামিক ইট আর সাদা-কালো টাইলস দিয়ে গ্রিক স্থাপত্যশিল্পের আদলে ৩৮.৩০ একর জমির ওপর নির্মিত সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সটির কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বেদনার চিত্র। সাদা পাথরে নির্মিত গোলাকার এক গম্বুজ বিশিষ্ট সমাধিসৌধের ওপর দেয়ালে জাফরি কাটা। জাফরি কাটা দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে। ওপরে কাচের কারুকাজ দিয়েও বিভিন্ন আঙ্গিকে বাইরের আলো ছড়িয়ে পড়ে কবরের বিভিন্ন স্থানে।
চারদিকে কালো টাইলস ও মাঝখানে শ্বেতশুভ্র টাইলসে বঙ্গবন্ধুর কবরটি বাঁধানো। কবর তিনটি ঘিরে রাখা হয়েছে রেলিং দিয়ে।
দর্শনীয় স্থান, বস্তু বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের আশপাশের এলাকায় আরো অনেক কিছু দেখার রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদি পৈতৃক বাড়ি, ছেলেবেলার খেলার মাঠ, প্রিয় বালিশা আমগাছ, বড়তালাব (পুকুর) শেখবাড়ি জামে মসজিদ (স্থাপিত ১৮৫৪ সালে) ইত্যাদি। আছে হিজলতলা ঘাট, যেখানে বঙ্গবন্ধু ছোটবেলায় গোসল করতেন ও সাঁতার কাটতেন।
কমপ্লেক্সেটির দক্ষিণ দিকে মূল ফটকের (১ নম্বর গেট) কাছে রয়েছে একটি পাঠাগার ও জাদুঘর। পাঠাগারে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বইসহ প্রায় আট হাজার বই রয়েছে। রয়েছে গবেষণাকেন্দ্র, প্রদর্শনীকেন্দ্র, উন্মুক্ত মঞ্চ, পাবলিক প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, মসজিদ, বকুলতলা চত্বর ও স্যুভেনির কর্নার। সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স থেকে ৩০০ মিটার দূরে সাবেক খাদ্যগুদামের পাশে বাইগার নদীর তীরে ও দুই কিলোমিটার দূরে পাটগাতী বাজারসংলগ্ন মধুমতী নদীর তীরে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত দৃষ্টিনন্দন দুটি লঞ্চঘাট। সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের পাশেই টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার উদ্যোগে নির্মিত শেখ রাসেল শিশু পার্ক।
প্রদর্শনীকেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের আলোকচিত্র, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন শিল্পীর আঁকা শিল্পকর্ম, মুক্তিসংগ্রামের নানা পর্যায়ের দেশ-বিদেশ থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে যে কফিনে করে ঢাকা থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটিও সংরক্ষিত এখানে। কমপ্লেক্স এলাকায় দর্শনার্থীরা বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি, আন্দোলন-সংগ্রাম, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও ত্যাগ সম্পর্কে জানতে পারে।
দর্শনের সময়
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স এবং সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাঠাগার খোলা থাকে।
আনন্দবাজার/শহক