ঢাকা | শনিবার
২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৈয়দপুরে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

সৈয়দপুরে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের ডাঙা পাড়ায় স্বামীর বাড়ি থেকে লাভলী বেগম (৪৫) নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিন সন্তানেরা জননী ওই গৃহবধূ ওই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার রেজেকা বেগমের দেবর সবুজ আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী।

মৃত্যুর কারণ নিয়ে পরস্পর বিরোধী মতামত পাওয়া গেছে। স্বামীর পরিবারের দাবী আত্মহত্যা করেছে আর বাবার পরিবারের অভিযোগ তাকে মারপিট করে মেরে ফেলা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২ টায় লাশ থানায় আনা হয়েছে এবং বুধবার দুপুরে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, নিহত লাভলী বেগম সৈয়দপুরের পার্শবর্তী নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের দুরাকুুটি ঘোপপাড়ার মোবার হোসেনের মেয়ে। বিয়ে হয়েছিল সৈয়দপুরের খাতামধুপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের আমিন নামে এক ব্যক্তির সাথে। সেখানে প্রায় ১৫ বছরের সংসারে ২ টি মেয়ে সন্তান হয়।

চার বছর আগে পাশের ৩ ওয়ার্ডের ডাঙাপাড়ার মৃত কালা মামুদের ছেলে দুই সন্তানের জনক সবুজ আলী কৌশলে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং এক পর্যায়ে দুইজন পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। দীর্ঘ দিন ঢাকায় অবস্থান করে গার্মেন্টসে চাকরী করছিল। তাদের দেড় বছর বয়সী একটি ছেলে আছে।

প্রায় ৭ মাস আগে সবুজের বাবা মারা গেলে স্বামী-স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে এসে বসবাস শুরু করে। এতে সবুজের প্রথম স্ত্রী হেলালী বেগম মেনে নিতে চায়নি। ফলে প্রায়শই ঝগড়া হতে থাকে এবং এজন্য সবুজ দ্বিতীয় স্ত্রীকেই দোষারোপ করে। প্রতিবাদ করায় গালাগালি ও মারধর করে। এভাবে মাঝে মাঝেই মারপিট চলতে থাকে।

সম্প্রতি এই অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেছে এবং পরিবারের সবাই তাতে যোগ দেয়ায় চরম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে লাভলীর জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় এই মৃত্যুর ঘটনায় পারিবারিক নির্যাতনকেই দায়ী করা হচ্ছে। হত্যা করা না হলেও মারপিটে অতিষ্ঠ হয়েই সে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মৃতার বড় জা মহিলা মেম্বার রেজেকা বেগম বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ছিল। সতিনের ঘরে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। তবে তা টুকটাক কথা কাটাকাটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কখনই তা বেধড়ক মারপিট পর্যায়ে নয়। তাই নির্যাতনের কারণে মৃত্যুর প্রশ্নই উঠেনা।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন বিকাল থেকেই লাভলী বাচ্চাসহ তার ঘরে অবস্থান করছিল। রাত ৮ টার দিকে বাচ্চাটা খুব কান্না করছিল। কাঁদতে কাঁদতে বাচ্চার গলার স্বর ভেঙে গেলেও এবং অনেক সময় পেরিয়েও লাভলী নিশ্চুপ থাকায় বাধ্য হয়ে প্রথমে ওর সতিন হেলালী এবং পরে বাড়ির অন্যান্য মহিলারা গিয়ে দরজায় ধাক্কাধাক্কি ও ডাকাডাকি করি।

কিন্তু তাতেও কোন সাড়া না পেয়ে পিছনে জানালা দিয়ে দেখি সে গলায় ওড়না পেচানো অবস্থায় ঘরের চালের পাড়ের সাথে ঝুলছে। বাধ্য হয়ে আশপাশের লোকজনকে ডেকে শাবল দিয়ে দরজা ভেঙে ঢুকি। ততক্ষণে ওড়না খুলে খাটের উপর পড়ে যায়। কাছে গিয়ে গায়ে হাত দিয়ে বুঝতে পারি লাভলী মারা গেছে।

রেজেকা বেগমের স্বামী সোহাগ আলী বলেন, ছোটভাই সবুজ ওই মহিলাকে বিয়ে করে ঢাকায় যাওয়ার পর তার প্রথম স্ত্রী ও দুই সন্তানকে আমিই ভরণ পোষণ দিয়েছি। দীর্ঘ দিন পর বাড়িতে আসলেও সবুজের দ্বিতীয় স্ত্রী এখানে থাকতে চাচ্ছিল না। এতে সম্মত না হওয়ায় লাভলী তার স্বামী ও সতিনের সাথে অহেতুক ঝগড়া করত।

মাঝে মাঝে রাগ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেত এবং আত্মহত্যা করে সবাইকে ফাঁসানোর হুমকি দিত। একদিনের এমন ঘটনার সাক্ষী স্বয়ং ইউপি চেয়ারম্যান ও দুইজন গ্রাম পুলিশ। আজ সে তাই করেছে। আত্মহত্যার পথই বেছে নিয়েছে। অথচ সে সতিনের ঘরে থাকলেও অনেক বিলাসিতায় ছিল।

এদিকে লাভলীর ভাই আব্দুল জলিল বলেন, সবুজ একজন বখাটে। নিজের স্ত্রী থাকতেও লম্পটের মত অপকৌশলে আমার বোনের সুন্দর সংসার ভেঙ্গে তাকে বেকায়দায় ফেলে তার সাথে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। আগের মেয়ে দুটাকে মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছে। এখন আবার বাড়িতে নিয়ে এসে বড় বউকে দিয়ে উত্যক্ত করাসহ বেদম অত্যাচার শুরু করে।

নিহত গৃহবধূর খালু মিজানুর রহমান বলেন, সবুজের পরিবারের সবাই নির্যাতন করে মেরে ফেলে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। কারণ লাভলীর দুই হাত মুঠো করা আছে। তাছাড়া ফাঁস দেয়ার কথা বললেও গলায় কোন দাগ নাই। জিহ্বাও বের হয়নি বা চোখও বড় হয়নি। অর্থাৎ আত্মহত্যার কোন লক্ষণই পাওয়া যায়নি। বরং পিঠে কামড়ের এবং বুকে খামচি দেয়ার চিহ্ন আছে।

চাচা হাসেম আলী বলেন, লাভলী যদি আত্মহত্যা করেও থাকে তাহলে স্বামী ও সতিনের অত্যাচারেই অতিষ্ঠ হয়ে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা থেকে করেছে। এজন্য এই পরিবারের সবাই দায়ী। গতকাল ও আজকেও ভিষন মারপিট করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই। সন্তানের দোহাই দিয়ে টাকার বিনিময়ে মিমাংসার জন্য সবাই চাপ দিচ্ছে। কিন্তু আমরা মামলা করবো।

সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মফিজুল হক বলেন, প্রাথমিক সুরতহাল তদন্ত করা হয়েছে। এতে শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। চর থাপ্পড় মারা হয়ে থাকতে পারে তবে নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু তারপরও যেহেতু নিহতের অভিভাবকরা হত্যার অভিযোগ করছে তাই লাশ ময়না তদন্ত করতে মর্গে পাঠানোর জন্য নিয়ে আসা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এখনও কোন লিখিত অভিযোগ কেউ দেয়নি। অভিযোগ দিলে সে অনুযায়ী আইনানুগ প্রক্রিয়া নেয়া হবে। তবে মৃতার স্বামী সবুজ আলীকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ সে পলাতক। আর পোস্ট মর্টেম রিপোর্টেই পরিষ্কার হবে মৃত্যুর কারণ কি।

সংবাদটি শেয়ার করুন