দেশের পূর্বাঞ্চল রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন। এ স্টেশন দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গাতে অসংখ্য যাত্রী আন্ত:নগর, মেইল ও লোকাল ট্রেন দিয়ে ভ্রমণ করছেন। তাছাড়া এ স্টেশন থেকে আখাউড়া-ঢাকা রেলপথে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় তিতাস কমিউটার নামে একটি ট্রেন।
ট্রেনটি যখন আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে আসে তখন মূল প্ল্যাটফরমের বাইরে যাত্রা বিরতি দেওয়া হচ্ছে। এতে করে ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শতশত যাত্রী।
দীর্ঘ দিন ধরে ট্রেনটি নিয়মিত প্লাটফরমের বাইরের লাইনে রাখায় যাত্রাবিরতিতে হৈচৈ সৃষ্টি হচ্ছে। সেইসাথে ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে নানা সমস্যা পড়ছেন। অনেকে হাত পা ও ভেঙ্গেছেন এমন অভিযোগ যাত্রীদের রয়েছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী যাত্রীরা প্রতিবাদ করেছেন। বিষয়টি আমনে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তবে ট্রেনের চালকের সাফ কথা, তিনি যে ভাবে সিগন্যাল পাচ্ছেন সেইভাবেই ট্রেনকে ওই লাইনেই নিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, মূলত সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে প্রতিদিন শতশত যাত্রী এই ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। নিজেদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হবে বিধায় সংশ্লিষ্টরা ট্রেনটিকে যাত্রীদের জন্য উঠানামায় সহজস্থানে রাখছেন না। এই ট্রেনটি প্রতিদিন ভোর বেলা এই স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আবার দুপুরে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ট্রেনটি আসে। এরপর পুনরায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যায়। ঢাকা থেকে আবার আখাউড়ার উদ্যেশ্যে সন্ধ্যায় ট্রেনটি ছেড়ে আসে।
একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিগন্যালের (সংকেত বাতি) কাজ চলতে থাকায় মেনুয়্যাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ হাতে লাইন মিলিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। তিতাস কমিউটার ট্রেনটি আসার পর পরের দিন চলাচলের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে সেটিকে হাতে মিলিয়ে সংকেত দিয়ে আরেকটি নিয়ে রাখতে হয়। যে কারণে এটিকে প্লাটফরমের লাইনে না রেখে বাইরের লাইনে রাখা হয়। কেননা, মূল লাইনে রাখলে এটিকে দ্রুত সরিয়ে অন্য লাইনে নিয়ে রাখতে হবে। এতে করে সংশ্লিষ্টদের পরিশ্রম বেড়ে যাবে। আর প্লাটফরমের বাইরে রাখলে রাতের যে কোনো সময় এটিকে অন্য লাইনে নেওয়া যাবে।
ঢাকা থেকে আখাউড়ায় আসা ট্রেন যাত্রী মো: হারুণ মিয়া বলেন, এ জংশন স্টেশনে একাধিক লাইন থাকা সত্বেও তিতাস ট্রেনটিকে এমন জায়গায় রাখা হয় যেখানে উঠা কিংবা নামা দু’টোই বেশ কষ্ট। আবার নামতে পারলেও উঁচু প্লাটফরমে উঠা বেশ কষ্টদায়ক হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো তিতাস ট্রেন আসার কিছু সময় পর আরেকটি ট্রেন ঠিকই প্লাটফরমের লাইনে এনে রাখা হয়েছে। মো: দিদারুল আলম বলেন, তিতাস কমিউটার ট্রেন দিয়ে তিনি স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে নিয়ে ঢাকা থেকে আখাউড়ায় আসেন। ট্রেনটি প্লাটফরমের বাইরের দাঁড় করার কারণে নামতে গিয়ে পড়ে তার ছেলে হাতে প্রচন্ড ব্যাথা পান।
মো: সিরাজ মিয়া বলেন ব্যবসায়ীক কাজে প্রায় সময় তার ভৈরব যাওয়া হয়। আসার সময় তিতাস ট্রেনে তার আসতে হচ্ছে। ট্রেনটি প্ল্যাট ফরম ছাড়া যাত্রাবিরতি দেওয়ায় মালামাল নিয়ে নামতে খুবই কষ্ট হয়। ট্রেন থেকে মালামাল জানালা কিংবা দরজা দিয়ে নিচে ফেললে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রেন সংশ্লিষ্ট একাধিক চাকরিজীবী বলেন, এ নিয়ে প্রতিদিন যাত্রীদের বকাবকি শুনতে হয়। এভাবে উঠা-নামা কোনোভাবেই সম্ভব না। আমরা বিষয়টি আমাদের কর্তৃপক্ষকে বলেছি। কিন্তু রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন সংকেত বাতির কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত কষ্ট করতে হবে।’
আখাউড়া রেলওয়ে জংশন ট্রেন ইন্সপেক্টর (ট্রান্সপোটেশন) মো. তৌফিক বলেন, প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে হাতে মিলিয়ে ট্রেনের সংকেত ঠিক করতে হয়। যে সময়টাতে তিতাস কমিউটার আসে ওই সময়ে চট্টগ্রাম থেকে নাসিরাবাদ নামে আরেকটি ট্রেন আসে। দু’টি ট্রেন কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় দু’বার গিয়ে সংকেত মিলানো সম্ভব হয় না। তিতাস কমিউটার যেহেতু পরেরদিন ছেড়ে যায় সেহেতু এটিকে পরে অন্য লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। এটিকে যদি প্লাটফরমের লাইনে আনা হয় তাহলে নাসিরাবাদ প্রবেশ করাতে সমস্যা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যাত্রীরা কষ্ট করছে দেখতে পাচ্ছি। আমাদেরকে সময় দিতে হবে। যারা কাজ করছে তাদেরকে বলেছি ওই অংশের সংকেত বাতির কাজ যেন দ্রæত শেষ করে দেওয়া হয়। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে এর সমাধান হয়ে যাবে।’