কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কোরবানির পশু প্রস্তুত করছেন গবাদিপশুর খামারিসহ কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন খামার ও বাড়িতে বাড়িতে দেখা যাচ্ছে গরু ব্যবসায়ীসহ সাধারণ ক্রেতাদের আনাগোনা। পাশাপাশি উপজেলার পশুর হাটে উঠতে শুরু করছে কোরবানির পশু। পশু বিক্রেতারা বলছেন গো খাদ্যের দাম বেড়েছে, বেশি দামে পশু বেচতে না পারলে লোকসান হবে। ক্রেতারা বলছেন গতবারের চেয়ে গবাদিপশুর দাম অনেক বেশি চাচ্ছে। ক্রেতা ও বিক্রেতার এমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগে এখনো জমে ওঠেনি কোরবানির পশুর হাট।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১হাজার ৫৫৫ টি খামার ও কৃষকের বাড়িতে মোট ১৮ হাজার ৬৮৯ টি কোরবানী যোগ্য পশু রয়েছে। এরমধ্যে ৯ হাজার ৬১২ টি গরু, ৬৮ টি মহিষ ও ছাগল -ভেড়া রয়েছে ৯ হাজার ৯ টি।
উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার ৫০ টি। সে হিসেবে উপজেলায় চাহিদার তুলনায় ১৪ হাজার ৬৩৯টি পশু বেশী রয়েছে।
আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির পশু কিনতে পশুর হাট, গবাদিপশুর খামার ও কৃষকের বাড়িতে ঘুরে ঘুরে পছন্দের কোরবানির পশু দেখছেন ক্রেতারা। এ অঞ্চলের মানুষের কোরবানির পশুর পছন্দের তালিকায় রয়েছে গরু, মহিষ ও ছাগল- ভেড়া। অনেকে আবার কোরবানির পশু কিনতে শরণাপন্ন হচ্ছেন স্থানীয় দালালদের। ঈদে ভালো দামে পশু বিক্রি করে লাভের আশা করছেন খামারিসহ কৃষকরা। উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের কৃষক স্বপন কুমার বলেন, ঈদে বিক্রির জন্য আমি বাড়িতে একটা ষাঁড় পুষছি। গত কয়েকদিন ধরে গরুটি কিনতে অনেকেরই আসছেন, দাম করছেন। দামে এখনো বনিবনা হয়নি। তবে আশা করি ভালো দামই পাবো।
উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্ব ফুলমতি এলাকার খামারি সোহেল রানা জানান, তার কোরবানী যোগ্য ১০ টি ষাঁড় রয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু ব্যবসায়ীরা এসে তার গরুর দরদাম করছেন। ব্যবসায়ী ছাড়াও সাধারণ ক্রেতারাও আসছেন গরু দরদাম করতে। ক্রেতাদের চাহিদা দেখে ভালো লাভের আশা করছেন তিনি।
এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গবাদিপশুর খামারি ও কৃষকরা জানান, বেশি দামে খাদ্য কিনে গরুকে খাইয়ে মোটাতাজা করতে হয়েছে। বাজারে পশুর ভালো দাম না পেলে লোকসান হবে।পাশাপাশি ফুলবাড়ী উপজেলা ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ায় চোরাই পথে গরু দেশে আসলে গরু নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে বলেও জানান অনেকে।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে তারা ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকা মণদরে গরু কিনছেন। পশুর হাটে পর্যাপ্ত পশু উঠলেও এখনো ক্রেতারা খুব একটা হাটে আসতে শুরু করেন নি। তবে ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে ক্রেতাও বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
উপজেলার শাহবাজার এলাকার কলেজ শিক্ষক জাকারিয়া মিঞা বলেন, আমি প্রতিবছর হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কিনি। এবারেও পশু কিনতে হাটে গেছি। কিন্তু গবাদিপশুর খাদ্যের দাম বাড়ার অজুহাতে গতবারের চেয়ে সব ধরনের পশুর অনেক বেশি দাম চাচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান কনক জানান, এবার উপজেলায় সাড়ে ৪ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। চাহিদার চেয়ে প্রায় ৪ গুন বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী এসে গবাদিপশু কিনছেন। যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। এখন পর্যন্ত যে চাহিদা রয়েছে এবং যে দামে কোরবানির পশু বেচাকেনা হচ্ছে তাতে খামারি ও কৃষকের মোটামুটি লাভ হবে। ভারতীয় গরু চোরাই পথে যাতে আসতে না পারে সেজন্য গত উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় আলোচনা করেছি। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ, বিজিবিসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি।