ঢাকা | বুধবার
১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোয়াখালীতে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা

নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর বারলিংটন মোড় এলাকায় বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা আলতাফ হোসেন নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। তবে এই হত্যাকান্ডের কোন কারণ এখনও জানাতে পারেনি পুলিশ। বুধবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, নোয়াখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফজলে আজিম কচি’র স্ত্রী নুর নাহার বেগম (৪৫) ও হরিনারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের চলতি বছরের এসএসসি ফল প্রার্থী মেয়ে ফাতিহা আজিম প্রিয়ন্তী।

এদিকে এ ঘটনায়, বিকেল ৪টার দিকে জেলা শহরের হরিনায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয়রা বিদ্যালয়ের সামনের প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে। বিক্ষোভকারীরা এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে স্লোগান দেয়। এসময় সোনাপুর-চৌমুহনী সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘন্টাব্যাপি বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ চলে। পরে বিকেল ৫টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোর্তাহিন বিল্লাহ ও সুধারাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যাকান্ডের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত নূর নাহারের স্বামী ফজলে আজিম কচি শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। বুধবার সকাল ৯টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যান। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জানতে পারেন, তার বাসায় ডাকাত ঢুকেছে। তাৎ¶ণিক তিনি বাসায় এসে স্ত্রীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে জানতে পারেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মেয়েও মারা গেছে।

বার্লিংটন মোড়ের মমতাজ ফার্মেসির মালিক আমিন উল্যাহ জানান, ওই বাসার ভাড়াটিয়াদের শোর চিৎকার শুনতে পেয়ে আমি দ্রুত সেই বাসায় যাই। দু’তলা ভবনের নিচ তলায় প্রিয়ন্তী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, পাশেই এক যুবককে দেখলাম তার সারা শরীরে রক্তের ছাপ লেগে আছে। এসময় প্রিয়ন্তী কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিলো কিন্তু কথা বলতে পারছিলো না। সে হাতের ইশারায় ওই যুবককে আমাকে দেখায়। তাকে আটক করতে চাইলে প্রথমে সে দৌড়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। পরে স্থানীয় আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী এগিয়ে এসে তাকে প্রায় ২০০ মিটার দুর থেকে ধাওয়া করে আটক করা হয়। পরে স্থানীয়রা প্রিয়ন্তিদের দোতলার বাসায় গিয়ে দেখেন তার মা নুর নাহার বেগমও রক্তাক্ত অবস্থায় এক কক্ষে পড়ে রয়েছেন। আমরা প্রিয়ন্তীকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করি।

ওই বাসায় বসবাসকারী এক ভাড়াটিয়া নারী জানান, সকালে দ্বিতীয় তলা থেকে চিৎকার করতে করতে প্রিয়ন্তী রক্তাক্ত অবস্থায় দরজার সামনে আসে। পরে দরজা খুলে দিলে সে মেঝেতে পড়ে যায়। এসময় তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফজলে আজিম কচি’র ছোট ভাই, মোহাম্মদ জাকির হোসেন প্রিন্স ফেঞ্চু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, চিৎকারের আওয়াজ শুনে গিয়ে দেখি আমার ভাতিজি নীচ তলায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখি ভাবির লাশ। তিনি বলেন, সম্ভবত ভাবিকে আগে মেরেছে পরে ভাতিজিকে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় হসপিটালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রিয়ন্তীকে মৃত ঘোষণা করেন। আমি এমন হত্যাকান্ডের বিচার চাই।

প্রতিবেশি ও স্বজনরা জানান, ঠিক কারণে এমন ঘটনা ঘটলো তা কারই বুঝে আসছে না। নুর নাহার বেগম খুবই সদালাপি ও পর্দানশীল নারী ছিলেন। স্থানীয় কারও সাথে কোনো সমস্যা ছিলো না।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান পাঠান জানান, আটককৃত যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে যে আলামত আমরা পেয়েছি তাতে মনে হচ্ছে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে। নিহত মা মেয়ের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন ঘটনাস্থলে যান। তিনি জানান, মা মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় একজনকে স্থানীয়রা আটক করে। পরে তাকে পুলিশ থানায় নিয়ে আসে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন