ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দর্শনার্থীদের ‘বিস্ময়কর’ ভিড়

জমে উঠেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা

নতুন বছরের শুরুর দিনে রাজধানীর পূর্বাচলে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসর। মেলার শুরু হতেই ভিড় বাড়তে দেখা যায় দর্শনার্থীদের। প্রথম থেকেই দর্শনার্থীদের এমন ভিড়ে বিক্রেতারও এবার ব্যবসা নিয়ে আশাবাদী।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে মেলার প্রথম দিনে অন্তত ১০ হাজার এবং গতকাল দ্বিতীয় দিনে কমপক্ষে ১৫ হাজার দর্শনার্থীকে মেলায় ঘুরতে দেখা যায়। টিকিট বিক্রির দায়িত্বে নিয়োজিত একজন জানান, দর্শনার্থীদের এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এ বছর দর্শনার্থীর সংখ্যা সত্যিই বিস্ময়কর। ঢাকা, গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জ- তিন জেলা থেকে মেলার অবস্থান কাছাকাছি এবং যাতায়াত সহজ হওয়ায় এবার শুরু থেকেই মেলায় ভিড় দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
আরও কয়েকজন বললেন, আগের বছরের তুলনায় এবার প্রথম দুই দিনে আমরা অনেক বেশি সংখ্যক দর্শনার্থী দেখতে পাচ্ছি। আজ আমি প্রায় ৩০টি আইটেম বিক্রি করেছি, প্রথম দিন হিসেবে এই বিক্রি যথেষ্ট। হাতিল ফার্নিচার স্টলের ইনচার্জ জানান, দুই দিনে তারা কিছু অর্ডারও পেয়েছেন। আমরা মেলায় এবার অংশ নিয়েছি শুধু প্রচারের জন্য, বিক্রি আমাদের লক্ষ্য নয়।

বাণিজ্য মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সেক্রেটারি ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী মনে করছেন, পূর্বাচলে প্রথম ভেন্যু হওয়ায় গত বছর দর্শনার্থী কম ছিল। তিনি বলেন, আমরা এবার ৫০ লাখের বেশি মানুষ আশা করছি; এই সংখ্যা আগের বছর ছিল ২৫-৩০ লাখ, কারণ এখন মহামারি নেই। আগের বছরের তুলনায় এ বছর স্টলের সংখ্যা প্রায় ৫০ ভাগ বা ১০৬ বেড়ে ৩৩১-এ দাঁড়িয়েছে। মেলার নির্মাণাধীন রাস্তাও শেষ হয়েছে।

বেশিরভাগ দর্শনার্থী স্টলগুলো ঘুরে দেখছেন। যদিও চার ভাগের একভাগ স্টল এখনও তোলা হয়নি। কিছু স্টলের আবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। আগামী শুক্রবারের মধ্যে সব স্টল পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে মেট্রোরেলের প্রতীকী কাঠামোসহ মূল ফটক, উৎসবমুখর আলোকসজ্জা, খোলা জায়গাসহ অন্যান্য আয়োজন মেলাকে এবার দিয়েছে আকর্ষণীয় রূপ। এতে শিশুদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সাধারণত, মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যর সময় অর্ধেক পেরোলে অর্থাৎ দ্বিতীয় সপ্তাহে গিয়ে ভিড় বাড়তে থাকে; কিন্তু এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন।

বিকেল থেকেই দেখা যায় দর্শনার্থীদের ভিড়, সন্ধ্যার পর আরও মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। যদিও তাদের বেশিরভাগই আশেপাশের এলাকা থেকে এসেছেন, তবে দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের সংখ্যাও কম ছিল না। নারায়ণগঞ্জ থেকে ৯ জন আত্মীয় নিয়ে মেলা ঘুরতে এসেছেন একজন। প্লাস্টিকের বালতি ও শীতের কাপড় কেনার পর বলেন, বাণিজ্য মেলায় ঘোরা আমার জন্য সবসময়ই একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা, এখানে এসে একইসঙ্গে আড্ডা দেওয়া এবং কেনাকাটা করা যায়। কর্তৃপক্ষ এবার মেলার ভিতরে খুব ভালো পরিবেশ তৈরি করেছে। প্রধান এক্সিবিশন হলগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং হলের বাইরের এলাকাগুলোও বেশ পরিপাটি এবং সুন্দর।

১৯৯৫ সাল থেকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো স্থানীয় পণ্যের প্রচার, সম্প্রসারণ, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তাকে কেন্দ্র করে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে আসছে। তবে ২০২১ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এ আয়োজন করা যায়নি। ২০২২ সালে মেলার ভেন্যু আগারগাঁওয় থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পূর্বাচলে। এবারের বাণিজ্য মেলায় টেক্সটাইল, কার্পেট, প্রসাধনী, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া/কৃত্রিম চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এবং নেপাল – মোট ১০টি দেশের উদ্যোক্তারা ১৭টি স্টল নিয়ে এবারের মেলায় অংশ নিয়েছেন।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন