দেশের মানুষের আস্থা ও ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ‘৯৯৯’। যেকোন বিপদে-আপদে সাধারণ মানুষকে আরও দ্রুত সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হচ্ছে জাতীয় এই সেবা ইউনিটকে। সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে নতুন করে সাজানো হচ্ছে পুলিশের এই ইউনিটটিকে।
এই জরুরী সেবার প্রতি মানুষের আস্থা আরও স্পষ্ট হয় দুটি ঘটনায়। গত ২০ আক্টোবরে বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের এআরখান বাজারে চুরি করতে গিয়ে একটি দোকানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এক চোর। চুরি করা মালামাল গুছিয়ে ব্যাগ ভর্তি করতে তার বেশি সময় লেগেছে। সময় গড়িয়ে সকাল হয়ে গেছে। সকাল হলে লোকজন দোকানের পাশে অবস্থান টের পায় চোর। এ অবস্থায় সেখান থেকে বের হলে, তার রক্ষা হতো না। তার জীবনের ঝুঁকি ভেবে এ সময় নিজেকে উদ্ধার করতে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চান তিনি। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপারটি বেশ সাড়া ফেলে। উদ্ধার করতে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা কিছুটা অবাক হয়েছেন। পরে তাকে চুরি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালতের বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ওই ঘটনার ঠিক ১০ দিন পরেই (৩০ অক্টোবর) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পায়রাডাঙ্গা গ্রামেও ঘটে একই রকম ঘটনা। সেদিন রাতের আঁধারে অন্যের ঘেরে জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন পাঁচ ব্যক্তি। পাশের ঘেরে পাহারায় থাকা ব্যক্তি টের পেয়ে ফোনে মালিককে জানিয়ে দেন। তিনি লোকজন নিয়ে এসে ধাওয়া দিলে তারা পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে গণপিটুনি থেকে বাঁচতে তাদের মধ্যে একজন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দেন।
ফোন দিয়ে ‘খুব বিপদে আছি’ বলে পুলিশের কাছে সহায়তা চান। পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে চুরির মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ওই পাঁচ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
‘চোরদের’ দুই ঘটনা কিছুটা ব্যতিক্রম হলেও এমন আরও হাজার হাজার গল্পের সাক্ষী হচ্ছেন সংস্থাটিতে কর্মরতরা। বাল্যবিবাহ, গৃহকর্মী নির্যাতন, পারিবারিক নির্যাতন, সাইবার অপরাধ, ধর্ষণ, অগ্নিকাণ্ড, সড়ক দুর্ঘটনা ও নৌদুর্ঘটনাসহ যে কোনও বিপদে মুহূর্তের মধ্যে সাড়া দিচ্ছে ‘৯৯৯’।
জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ কল সেন্টার থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে চলতি (২০২২) বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৯৯৯-এ সারা দেশ থেকে মোট ৪ কোটি ২৫ লাখ ১৯ হাজার ৫৬৩টি কল এসেছে।
তবে এর মধ্যে কোনও কারণ ছাড়াই ‘অহেতুক কল’ এসেছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৮৫ হাজার ৯০টি। আর যারা সত্যিকার অর্থে সেবা পাওয়ার জন্য ফোন করেছেন তাদের মধ্যে সার্ভিস দেওয়া সম্ভব হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৩ জনকে। এসব কলের মধ্যে মিসকল দিয়েছে ৪৩ লাখ ৬ হাজার ৮৫টি। ব্লাংক কল ১ কোটি ৮৪ লাখ ৯০ হাজার ৩০৯টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবার ভরসা এখন সরকারি জরুরি সেবা ‘৯৯৯’।
জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ এ আসা কলের ধরণ:
জাতীয় জরুরি সেবা পেতে আসা কলগুলোর মধ্যে পুলিশি সহায়তা পেতে কল এসেছে ৮ লাখ ৩৬ হাজার ৭০৩টি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৯১ হাজার ১০৮টি ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের জন্য ১ লাখ ৭ হাজার ৫৮২টি কল আসে।
৯৯৯ এর কলারদের মধ্যে ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৮৭ জন পুরুষ, ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৬৭ জন শিশু এবং ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯২৮ জন নারী। তাছাড়া সেবা নিতে ডিপার্টমেন্টাল কল এসেছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৩৯টি।
‘নতুন বছরে নতুনভাবে আমাদের পদচারণা বাড়বে। অতীতেও ৯৯৯ সেভাবে কাজ করে আসছে। একটি সুসংবাদ হচ্ছে, চলতি মাসেই আমরা ৯৯৯-কে নতুন কাজের উপযোগী হিসেবে দাঁড় করাচ্ছি।’ এমনই জানান সংস্থাটির প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি তাবারাক উল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘এতদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেবা নিতে ফোন দিলে আমরা প্রথমেই কলারের ঠিকানা সম্পর্কে জানতে চাইতাম। যে ব্যক্তি সাহায্য চাইছেন ওনার হয়তো তাৎক্ষণিক সাহায্য প্রয়োজন। তবে এখন থেকে প্রতিটি কলের দ্রুত রেসপন্স করার জন্য এখন থেকে কল করার সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যক্তির আইডেন্টিফিকেশ, লোকেশন এবং অবস্থান ৯৯৯ নাইনে চলে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘এতে সেবা আরও দ্রুততম সময়ে দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি আরও যোগ করেন, মানুষের অসচেতনতার জন্য কোনও কোনও সময় আমরা সার্ভিস দিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। ৯৯৯-এ সাধারণ মানুষ ফোন দেয় সেবা নেওয়ার জন্য। কিন্তু অনেকে আছে ফোন দিয়ে অযথা কথা বলতে চান। তার সার্ভিসের দরকার নেই, তারপরও কথা বলতে চান। ফোন দিয়ে শুধু শুধু ডিস্টার্ব করেন। এ বিষয়গুলো আমাদের কাছে মাঝে মাঝে বিড়ম্বনা মনে হয়।’
আনন্দবাজার/কআ