- আতশবাজিতে ২০২২ সালে বিশ্বে প্রাণহানি ১৬
- আলোর ঝলকে ঢাকায় পাখিদের আতঙ্ক
- বাজি-পটকায় থাকে সহজদাহ্য মিশ্রণ
ইংরেজি বর্ষবরণের আনন্দ উদযাপন করতে গিয়ে বিশ্বজুড়ে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এটি যে শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা নয় বরং পশু-পাখির চলাচলেও প্রভাব ফেলে। গত ২০২২ সালের বর্ষবরণে অনেক চড়ুইপাখি নিজের বাসা ছেড়ে ভয় ও আতঙ্কে মানুষের ঢুকে গিয়েছিল। প্রতিবারই ডিসেম্বরের শেষ দিনটি পালন করতে শহর থেকে গ্রামে আতশবাজি, পটকা ফাটানোসহ নানান ধরনের উপদ্রবে মেতে উঠে মানুষ। গতবছর বিশ্বের অনেক দেশে যানবাহনে অগ্নিকাণ্ডসহ বহু ধরনের দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হয়েছে। শুধু পটকা, আতশবাজি ও ফানুসের আগুনেই অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছিল দেড় শতাধিক। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিমানবন্দরও।
থার্টিফার্স্ট নাইটে ইউরোপ মহাদেশে পটকা, আতশবাজি ফাটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও তা মানেনি অনেকে। এতে মূল্যও দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে শুধু রাজধানরী ঢাকাতেই ফানুস থেকে অন্তত ১০ জায়গায় ও সারাদেশে ৫৪ জায়গায় আগুনের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ড আর শব্দদূষণের কবল থেকে রক্ষা পেতে জাতীয় জরুরি সেবাকেন্দ্রে এসেছে বহু ফোনকল। মধ্যরাতের হঠাৎ শব্দবোমায় আতঙ্কিত হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে এসেছে বহু পশুপাখি। যার চিত্র ছিল ঢাকা ও ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতেও।
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই নানা ধরনের উৎসব-আনন্দ ঘিরে আতশবাজি পোড়ানো হয়। প্রবল শব্দের সঙ্গে রাতের অন্ধকার ভেদ করে আলোর রোশনাই ছড়িয়ে পড়ে আকাশে। অপূর্ব সেই দৃশ্যে বিমোহিত হয় মানুষ। অন্যরকম এক উল্লাসে ফেটে পড়ে সব বয়সীয়রাই। বিশেষ করে ইংরেজি বর্ষবরণে আতশবাজি পোড়ানোর মহোৎসবে মেতে ওঠে গোটা বিশ্বের মানুষ। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বহুদিন ধরেই দেশে আতশবাজি পোড়ানোর উৎসব দেখা যাচ্ছে।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, বহুকাল আগে থেকেই নানা উদ্দেশ্যে আতশবাজি ব্যবহার করে আসছে বিভিন্ন দেশের মানুষ। অনেকের মতে, আতশবাজির প্রথম প্রচলন হয় চীনে। আজ থেকে প্রায় দু’হাজার বছর আগে হ্যান রাজবংশের রাজত্বকালে প্রথম আতশবাজির প্রচলন হয়। তখন মনে করা হতো পৃথিবীতে অনাবৃষ্টি, মহামারী, ভূমিকম্পসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে অপদেবতাদের অপকর্মের ফলে। সেজন্য অপদেবতাদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে হ্যান রাজারা আকাশে আতশবাজি ছুঁড়তেন। ফোটাতেন নানারকম বাজি-পটকা। সেই থেকেই চীনা সংস্কৃতির অংশ হয়ে যায় আতশবাজি।
বিজ্ঞানীরা আরো জানাচ্ছেন, বাজি-পটকার মধ্যে থাকে সহজদাহ্য মিশ্রণ। যা বাতাসের সাহায্য ছাড়াই জ্বলতে পারে। এজন্য প্রধানত ব্যবহার করা হয় পটাশিয়াম ক্লোরেট বা নাইট্রেট অথবা সোডিয়াম নাইট্রেট। এছাড়া দাহ্যপদার্থ হিসেবে থাকে কাঠ-কয়লার গুঁড়ো, সালফার বা গন্ধক ইত্যাদি। আগুন লাগলে, পটাশিয়াম ক্লোরেট থেকে প্রচুর অক্সিজেন বেরিয়ে আসে। আর তারই সাহায্যে অন্য পদার্থগুলো জ্বলতে থাকে।
ফোর্বসের এক প্রতিবেদনেও আতশবাজির ভয়াবহতা উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, আতশবাজির কণাগুলো ধাতুর লবণের সঙ্গে বিক্রিয়া করে শুধু যে ধোঁয়ার সৃষ্টি করে তা নয়, এর ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস হিসেবে চিহ্নিত কার্বন মনোঅক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেনযুক্ত গ্যাস তৈরি হয়। যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণগুলোর অন্যতম। এই গ্যাস এবং ধাতুযুক্ত কণাগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে খুব দ্রুত ফুসফুস এবং রক্তে মিশে যেতে পারে। ফলস্বরূপ তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে।
অন্যদিকে, আতশবাজির সময় যে ভয়াবহ শব্দ তৈরি হয়, তা শুধু যে নারী, শিশু আর বয়স্কদেরই শ্রুবণ ইন্দ্রিয় বা হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে তাই নয়, বরং প্রাণিজগতে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনে। বিশেষ করে গভীর রাতে যখন প্রাণিরা ঘুমিয়ে থাকে তখন অকস্মাৎ বিকট শব্দ তাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠে। শব্দবাজির মতো আলোর বাজিও দূষণ ছড়ায়। যে কোনো বাজিই স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। বাজির বিষাক্ত ধোঁয়ায় করোনা আক্রান্তদের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়।
আনন্দবাজার/শহক