- কোটি টাকার ক্ষতি
গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় হাজী আব্দুর রহিম পাইকারী কাপড়ের মার্কেটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিটের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ইতোমধ্যে মার্কেটের দু’শতাধিক দোকান ও মালামাল পুড়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। গত রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাজী আব্দুর রহিম পাইকারী কাপড়ের মার্কেট আগুন লাগে। আগুনে কোন হতাহতের খবর, ক্ষয়-ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ ও আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি।
মার্কেটের পাইকারি পাইকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান জোবেদা কটেজের ব্যব¯’াপক আব্দুল আজিজ জানান, সাড়ে ৯টার দিকে মার্কেটে পূর্বপাশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং তা মুহুর্তে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে ¯’ানীয়রা ফায়ার সার্ভিসের খবর দেয়। দোকানে তার ২০ লাখ টাকার শাড়ি ও লুঙ্গি ছিল। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তিনি দোকান থেকে মালপত্র বের করতে বের করে আনতে পারেননি।
অপর পাইকারি দোকান আজিজ হাউজের মালিক আব্দুল আজিজ জানান, তার দোকানে ৬০লাখ টাকা মালামাল মজুদ করা ছিল। আগুনে সব মালই পুড়ে গেছে। আগুনে কারণে তার দোকানে থেকে কোন মালামাল বের করতে পারেননি। তাদের মত এখানে দোকানের মালামাল কেউ বের করতে পারেনি। কোটি কোটি টাকার মত মালামাল পুড়ে গেছে।
হাজী আব্দুর রহিম পাইকারী কাপড়ের মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী আব্দুল মতিন জানান, প্রায় দুইশ দোকান ও তিনশ ভিট ভাড়া নিয়ে এ মার্কেটে ছোট বড় মিলে ৫শ থেকে ৬শ ব্যবসায়ী ব্যবসা পরিচালনা করতো। শীতের বিভিন্ন ধরনের কাপড়সহ শাড়ি, লুঙ্গী, থ্রিপিস, ওড়না, কম্বলসহ সব দোকানেই মালামালে পরিপূর্ণ ছিল। সারাদিন টুকটাক কাস্টমার থাকলেও সন্ধ্যার পর মার্কেটে প্রচুর ভিড় হয়। রোববার রাত ৯টার কিছু সময় পর হঠাৎই মার্কেটের পূর্ব-দক্ষিণ পাশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহুর্তেই আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং আশপাশের দোকান গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
মার্কেটের পাইকারি পাইকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রংধনু ফ্যাশনের ব্যব¯’াপক রমজান আলী জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে মার্কেটে আগুন দেখতে পেয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যায়। মুহুর্তেই আগুন তার দোকানে লেগে যায়। দোকানে থাকা শীতের কাপড়, শাড়ি, লুঙ্গি, থিপিসসহ কোন কিছুই বের করে আনতে পারিনি। দোকানে ৩০লাখ টাকার মালামাল মজুদ করা ছিল। চোখের সামনে লাখ লাখ টাকার মালামার পুড়ে গেল, দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।
অপর পাইকারি দোকান আল হাফিজ লুঙ্গি হাউস’র মালিক হাফিজুর রহমান জানান, অগ্নিকাণ্ডের কারণে তার দোকানে থেকে কোন মালামাল বের করতে পারেননি। তার দোকানে প্রায় ৬০ লাখ টাকার মত লুঙ্গি ছিল। তাদের মত এখানে দোকানের মালামাল কেউ বের করতে পারেনি কোটি কোটি টাকার মত মালামাল পুড়ে যাচোছ। মার্কেটের ব্যবসায়ীদের দাবি, অগ্নিকান্ডের ওই মার্কেটের প্রায় শত কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।
মার্কেটের মালিক হামিদুর রহমান জানান, মার্কেটে ছোট-খাট সবমিলে ৫ শতাধিক দোকান ছিল। সবগুলো দোকান ও মালপত্র পুড়ে গেছে।
উদ্ধারের নামে লুটপাট
কাজী গার্মেন্টসের দোকান মালিক জয়নাল কাজী । তিনি বলেন, তার দোকানে ৮০/৮৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল এবং ক্যাশে ছিল নগদ ৩ লাখ ২ হজার ৮শ’ টাকা। সোমবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানে গিয়ে দেখেন তার ক্যাশে থাকা নগদ তিন লাখ টাকা নেই। মালামাল ও পুড়ে গেছে। সুযোগ বুঝে এক শ্রেণীর লোক উদ্ধার করার নামে দোকানের মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।
এস টি এল গার্মেন্টস তৈরি পোশাকের দোকানের মালিক মুক্তার হোসেন জানান, আগুন লাগার পর দোকানের মালিক ও লোকজন কাপড় উদ্ধার করে বাইরে রাখার পর সেখান থেকে ও দোকান থেকে উদ্ধার করার নামে মালপত্র লুটপাট হয়েছে। মালপত্র এছাড়াও এক শ্রেণীর লোকেরা দোকানে থাকা ক্যাশের নগদ টাকা লুটপাট করে নিয়ে গেছে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারি পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন আরো জানান, মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তায় এলাকার হাজী আব্দুর রহিম পাইকারী কাপড়ের মার্কেটে আগুনের খবর পেয়ে প্রথমে জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের চারটি ও পরে টঙ্গী থেকে আরো দুইটি ইউনিট ঘটনা¯’লে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়।
মার্কেটের রাস্তা খুব সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শেষ করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। প্রায় তিন ঘন্টায় রাত সোয়া ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।
