পর্যটনশিল্পকে উন্নত করতে পারলে দেশে আগামী ১০ বছরে ৩৫ লাখ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। দেশের অর্থনীতিতে পর্যটন বড় একটি স্থান থাকলেও আমরা সেটি বাস্তবায়ন করতে পারছি না। বর্তমানে ৪ কোটি যুবক আছে। তাদের পর্যটনবান্ধব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারলে এ খাতে অবস্থা পাল্টে যাবে। সেমিনার সিরিজ ‘ট্যুরিজম: এ প্যানাল্টি শুট ফর দ্যা ইকোনোমি অব বাংলাদেশ-১০’ পোস্টকোভিড-১৯ ট্যুরিজম: কি টুলস টু এচিভ দ্যা এসডিজিস ইন বাংলাদেশ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
গতকাল বুধবার রাজধানী ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও সম্মানিত অতিথি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এমপি।
সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন-এসডিএফের চেয়ারপার্সন সাবেক সিনিয়র সচিব আব্দুস সামাদের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম পুলিশের ডিআইজি মো. ইলিয়াস শরিফ, এভিয়েশন অপারেটরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব মফিজুর রহমান, ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশি, মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভ্রমণ পত্রিকার সম্পাদক আবু সুফিয়ান, দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি-এফবিসিসিআই এর পর্যটন বিষয়ক পরিচালক নাসির মজুমদার।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পরিকল্পনার একটি বৈপরিত্য আছে। এখন বিশ্ব চলছে মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে। সকল রাষ্ট্রীয় সম্পদে সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বা পরিকল্পনা। আমরা এখন আর সেই স্থানে নেই।
এম এ মান্নান বলেন, মানুষের মাঝে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা আমাদের লক্ষ্য। শোষণ-লুণ্ঠন কমিয়ে আনা। আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ বেশি নয়। অনেক সময় ধার-কর্জ করতে হয়। এজ্য পর্যটনে হোটেল-মোটেলে ব্যক্তিখাতেই এগিয়ে আসতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন এসব সমাধান করা দরকার। অভ্যন্তরীণ পর্যটনস্থানে সাধারণ কাজ যেমন টয়লেট, বসার, পানি পান, কাপড় বদলানোর ও শিশুর দুধপানের জায়গা তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশ অর্থনৈতিক চাপে আছে। এই সংকট পাড় হতে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। যতটুকু ক্ষতি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। ঋণ করে চলতে হয়। এই ঋণের টাকা কোথায় কাজে লাগাচ্ছে সেটি দেখতে হবে। ঋণের টাকায় কফি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে হবে না।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আত্মবিনাশী কাজে কোন রাজনৈতিক দল যেন না যায়। সড়ক, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ তথা পাবলিক সম্পত্তিতে কোন দলই হাত দেবে না। সরকারের ধারাবাহিকতা, সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে।
মো. মাহবুব আলী বলেন, প্রাইভেট সেক্টরে কিছু ইনসেনটিভ দিতে হবে। আমাদের অনেক অপরিকল্পিত কাজ হয়েছে। এসবের কোন অর্থ নেই। পর্যটনে উদার হতে হবে। অর্থাৎ যাদের যা দরকার তা দিতে হবে। আব্দুস সামাদ বলেন, বিশ্বে পর্যটনের আয়ের ক্ষেত্রে এশিয়ার মধ্যে চীন, থাইল্যান্ড এগিয়ে আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বে যুদ্ধের কারণে অনেক দেশ লাভবান ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এনার্জি ক্রাইসিসের কারণে ইউরোপীয়দের আগমনকে প্রাধান্য দেয়া দরকার। শ্রীলঙ্কা বিভিন্ন প্যাকেজ সুবিধা দিয়ে গত মাসে ১০০ কোটি ডলার আয় করেছে।
মো. মোকাম্মেল হোসেন বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে ২০১৭ সালে বিশে^ অনেক দেশের মধ্যে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা ইচ্ছা ছিল পৃথিবীর মানুষরা বাংলাদেশে আসবে। কক্সবাজারকে জেনেভা হিসেবে স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি ১৯৭২ সালে পর্যটন বিভাগ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশকে পরিকল্পিত পর্যটনস্থান পরিণত করতে কাজ করা হচ্ছে। আমাদের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ৩-৪ শতাংশ অথচ বিশ্বে ১০ শতাংশ। ব্লু ইকোনোমিতে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।
মো. ইলিয়াস শরিফ বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ২০১৩ সাল থেকে পর্যটকদের জান ও মালের নিরাপত্তা দিতে কাজ করছে। আমরা কাক্সিক্ষত অর্থনীতি অর্জনে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
শিবলি আজম কোরেশি বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে বিনিয়োগের সম্পর্ক রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী আল্লাহ তা’য়ালা। আমাদের পূর্ব-পুরুষরা কিছু বিনিয়োগ করে গেছেন। আমরা স্বল্প বিনিয়োগ করতে পারি। পর্যটন সম্পদগুলোকে সচেতনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে পরবর্তী প্রজন্ম ব্যবহার করতে পারে। পর্যটনের ক্ষতি ১০০ ভাগ পূরণ করা সম্ভব। পরিবেশের দোহায় দিয়ে পর্যটন বন্ধের অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দাবিও জানান তিনি।
আবু সুফিয়ান বলেন, পর্যটন ১০৯টি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। ১১৩টি উপখাত এটিতে জড়িত। আগামীতে এক লাখ পর্যটকের ৪৩ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হয়। বাংলাদেশের পর্যটন ১১টি এসডিজির সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশে ২৩ মন্ত্রণালয় ও ৫৫টি বিভাগের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২ হাজার ৩৪৬টি পর্যটনস্থান আছে। দেশে আছে ১৬টি সমুদ্র সৈকত। তারমধ্যে ১০টির অবস্থা বিশে^ ভিন্ন যা অন্য কোথাও নেই। দেশের ৪ কোটি যুবক আছে আর ২০৩৩ সালে ৩৫ লাখ কাজ সৃষ্টি হবে পর্যটনে। ২০১৯ সালে প্যারিসে ৯ কোটি পর্যটক গেছে।
তিনি বলেন, দেশে ১ লাখ ৯ হাজার কোটিপতি আছে। ২০২১ সালে ৩ কোটির ওপরে দেশিয় পর্যটক দেশের বিভিন্নস্থানে গেছে। আর আমাদের দেশের ২৯ লাখ মানুষ প্রতি বছর ভারতে যায়। শ্রীলঙ্কায় বছরে ২২ লাখ রাশিয়ানরা আসে। দেশের ২২টি এয়ারপোর্টের মধ্যে ১৫টি ব্যবহৃত হয় না। এসব এয়ারপোর্টকে ব্যবহার করা যায়। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে ২০ বছরে ১০ জন মন্ত্রী ও ১৮জন সচিব বদল হয়েছে। তারা কিভাবে কাজ করবে?
আনন্দবাজার/ শহক