ঢাকা | বুধবার
১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাথর-বালির রমরমা বাণিজ্য

পাথর-বালির রমরমা বাণিজ্য

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার চলতি নদীতে বালি বা পাথর উত্তোলনে সরকারি কোনো ইজারা না থাকলে দিনদুপুর সনাতন পদ্ধতি ও ড্রেজার দিয়ে বালু পাথর উত্তোলন ও পরিবহন চলছে। প্রতিদিনই ভোর থেকে কয়েক শতাধিক শ্রমিক ও ড্রেজার মেশিং পাথর উত্তোলন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। অবৈধভাবে বালু পাথর উত্তোলনের ফলে নদী তীরবর্তী বসতবাড়ি ও ফসলিজমি নষ্ট হচ্ছে। অবৈধ পাথর পরিবহনে জড়িত ট্রলি চলাচলের কারণে ডলুরা থেকে হালুয়াঘাট সড়কও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে। নদী থেকে পাথর উত্তোলন করে রাখা হয় নদীর তীরে। ডলুরা এলাকায় নদীর তীরে অনেকগুলো পাথরের স্তুপ থাকলে পাথর অকশনও করেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। নদীতে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞার মাঝেও অসাধু ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট চক্রের যোগশাজসে নদীতে থেকে দেদারসে পাথর তুলছেন শত শত মানুষ। উত্তোলনকৃত পাথর নদী তীরে পৌঁছলেই নূন্যতম দামে এসব পাথর কিনে নিচ্ছেন চক্রের সদস্যরা। স্তুপ করে রাখা এসব পাথর পিকাআপ বা মালবাহী ট্রলিতে করে নিয়ে আসছেন নিরাপদ গন্তব্যে। চলতি নদীর ঢলুরা এলাকায় পাথর ব্যবসায়িদের এমন অবৈধ কাজ হরহামেশাই চলতে থাকলেও রহস্যজনক কারনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি দেখেও না দেখার ভান করছেন। পাথরের এই রমরমা ব্যবসার সাথে জড়িত অসাধু পাথর ব্যবসায়ি সিন্ডিকেন্ড চক্রের সাথে স্থানীয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের লোকেরাও জড়িত এমন অভিযোগ পাওয়া যায়।

দিনেদুপুরে পাথর উত্তোলন ও পরিবহন করা হলেও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিস বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কি এ তথ্য জানেন না। জানলেই বা কেন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না এমন প্রশ্ন করছেন অনেকেই।

সরেজমিনে চলতি নদী তীরবর্তী ডলুরা এলাকায় গেলে দেখা যায় অসংখ্য পাথর বোজাই পিকআপ ও ট্রলি নদী থেকে পাথর নিয়ে হালুয়ারঘাট এলাকায় আসছে। পথিমধ্যে থামিয়ে ট্রলির পাথর কোথায় থেকে নিয়ে আসা হয়েছে এমন প্রশ্ন করলে চালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন এসব চলতি নদীর পার থেকে নিয়ে আসছেন তারা। তারা নাকি শ্রমিক হিসেবে এখানে পাথর বোজাই অনত্র নিয়ে যান। ট্রলির পাথর কার জানতে চাইলে তিনি জানান এসব দেলোয়ার ভাইয়ের।

ট্রলি চালকের কথা শুনে চলতি নদীর তীরে গেলে দেখা যায় বড় বড় পাথরে স্তুপ। স্তুপের এক দিকে শ্রমিকরা পিকআপ, ট্রলিতে পাথর বোজাই দিচ্ছেন অন্য দিকে নদী থেকে পাথর এনে স্তুপ করছেন আরও কিছু শ্রমিক। আবু সালাম নামের এক শ্রমিকের কাছে স্তুপ করা পাথরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কামলা মানুষ। টাকা পাই ট্রলিতে পাথর ভরে দেই। নদীর পারে এসব পাথর কার এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ পাশের পাথর সাদেক মিয়া আর অই পাশের পাথর দেলোয়ারের। আলীনূর নামের আরেক ব্যক্তির কথাও জানান তিনি।

নদীতে গিয়ে দেখা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে বালি থেকে পাথর সংগ্রহ করছেন নানা বয়সী নারী পুরুষ ও শিশুরা। একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তোলনকৃত এসব পাথর কিনারে নিয়ে আসলে ফুট প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে পাথর কিনে নেন ব্যবসায়িদের লোকেরা। প্রতিদিন একজন শ্রমিক ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার ১ হাজার টাকার পাথর তুলতে পারেন একেক জন শ্রমিক।

ডলুরা গ্রামের আজির রহমান নামের এক শ্রমিক বলেন, আমরা পেটের দায়ে পাথর তুলি। পাথর তুলে পাথর পারে নিয়ে আসলে ব্যবসায়িরাই কিনে নেন। তবে তারা পাথরের ন্যায্যমূল্য দেয় না। পাথরের এ ব্যবসার সাথে এলাকার লোকেরাই জড়িত রয়েছেন বলে জানান তিনি।

বয়োবৃদ্ধ এ লোকের কথায় এলাকায় খোঁজ নিলে জানা যায়, পাথের সিন্ডিকেট ব্যবসার সঙ্গে ডলুরা, খাইগাঁও, ভাদেরটেকসহ কয়েকটি এলাকার একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত। যাঁদের মধ্যে দেলোয়ার, সাদেক মিয়া, আলীনূরসহ একাধিক ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়।

পাথরের বিষয়ে জানতে সাদেক মিয়ার মুঠোফোন কল করা হলে তিনি বলেন, গাংতো অনেক দিন  বন্ধ। গরিব মানুষ পাথর তুলে আমাদের কাছে বেঁচে। আমরা চুরিদারি করি এইগুলো আনি। আমিতো শুধ একা না আরও অনেকেই রয়েছেন। কি করবো ভাই আমাদেরওতো চলা লাগে। এভাবে পাথর ব্যবসা বৈধ কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি সাদেক মিয়া ফোনকল কেটে অন্য আরেকটি নাম্বারে ফোন করে বলেন, আমি সাদেক, আমার লোক আপনার সঙ্গে দেখা করবে।

এ বিষয়ে দেলোয়ারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ছোটখাটো ব্যবসায়ি। আগে পাথরের ব্যবসার করতাম এখন করিনা। এসব পাথর আমার না। আলীনূরও স্তুপের পাথর তাঁর নয় বলে জানান।

সীমান্ত এলাকায় চলতি নদীতে থেকে পাথর পরিবহনের ব্যাপারে জানতে সুনামগঞ্জ বিজিপির প্রতিনিধি নায়রায়নতলা বিওপি‘র মেহেদী হাসানের সাতে কথা বলেতে চাইলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, আমি নতুন এসেছি। এ সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা নেই তবে চলতি নদী সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন