ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুন্দরবনের ৬৬৫ স্পটে বসানো হচ্ছে ক্যামেরা

সুন্দরবনের বিভিন্ন স্পটে বসানো হচ্ছে ৬৬৫ জোড়া ক্যামেরা

সুন্দরবনে বাঘ গণনার পাশাপাশি হরিণ ও শূকর গণনার জন্য ৬৬৫ স্পটে স্থাপন করা হচ্ছে জোড়া ক্যামেরা। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু হবে। ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’-এর আওতায় প্রাথমিকভাবে বনের মধ্যে খালের দুই পাশে জরিপ করে বাঘের গতিবিধি ও পায়ের ছাপ লক্ষ্য করার কাজ শুরু করেছে বনবিভাগ। বাঘ গণনার ফলাফল জানা যাবে ২০২৪ সালের জুনে

উল্লেখ্য, সুন্দরবনে বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র বাঘ শুমারি খাতে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।

গণনার জন্য ক্যামেরা বসানোর কাজ আগামী ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে। কয়ামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে ২ বছর ছবি তুলা হবে। তার পর ২ মাস ছবি এ্যানালাইসিস করা হবে। এরপরই সংখ্যা নির্ধারণ করা যাবে। একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠিত হয় মূলত সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সুন্দরবনের মোট ৬৬৫টি স্পটে ক্যামেরা বসানো হবে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২০০টি, খুলনা রেঞ্জে ১৪০টি, শরণখোলা রেঞ্জে ১৮০টি, চাঁদপাই রেঞ্জে ১৪৫টি। প্রতিটি গ্রীডে এক জোড়া ক্যামেরা বসানো হবে। সবমিলিয়ে ৬৬৫ গ্রিডে ১ হাজার ৩৩০টি ক্যামেরা বসানো হবে।

এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে ৪৯ টি ভিলেজ টাইগার রেন্সপন্স টিমের ৩৪০ জন সদস্য ও ৪টি রেঞ্জের কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপের ১৮৫ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ প্রদান, তাদের পোশাক সরবরাহ ও প্রতি মাসে বনকর্মীদের সঙ্গে মাসিক সভা করা।

এ বিষয়ে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাস থেকে বাঘ গণনার কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের অর্থ ছাড় নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। পরে অক্টোবরে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ছাড় দেয় পরিকল্পনা কমিশন। সম্প্রতি দুই কিস্তিতে ১ কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

গত ৩১ মার্চ সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের আয়োজনে প্রকল্পের সার্বিক বিষয় তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল জানিয়েছিলেন, নতুন করে ২০০টি ক্যামেরা কেনা হবে। এ ছাড়া ২০১৮ সালের জরিপের সময় কেনা ৯০টি ক্যামেরা রয়েছে। সেগুলোও এবারের জরিপ কাজে ব্যবহার করা হবে।

উক্ত প্রকল্পে ২০২২ সালে বিশ্ব বাঘ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, বাঘ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে এমন দেশে ২০ জনের শিক্ষা সফরসহ ৫০০ জনের বিশেষ প্রশিক্ষণের সংস্থান এ প্রকল্পে রাখা হয়েছে। বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের সব কার্যক্রমে পরামর্শক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে বিশেষ প্রশিক্ষণ, জরিপ সম্পন্ন, তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, প্রতিবেদন তৈরি ইত্যাদি কার্যক্রমে স্বল্পমেয়াদে ১২ জন পরামর্শক বিশেষজ্ঞের সংস্থান প্রকল্পে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের সব জরিপ ও গবেষণার কার্যক্রম প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখা হবে।

প্রসঙ্গত, পৃথিবীতে আইইউসিএন সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে অতি সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে ৩ হাজার ৮৪০টি বাঘ রয়েছে। ২০১৫ সালে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬। ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। তার মধ্যে পূর্ণ বয়স্ক ৬৩টি, ১৮টি ১২ থেকে ১৪ মাস বয়সী এবং ৩৩টি শাবক।

আনন্দবাজার/কআ

সংবাদটি শেয়ার করুন