ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলে ইপিআর

স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলে ইপিআর

দেশের ২২৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাহিনীর গৌরবময় ভূমিকা ছিল স্বাধীনতার যুদ্ধে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে তৎকালীন ইপিআর পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআর এই পিলখানা থেকে সারা বাংলাদেশে প্রচার করেছিল। সুবেদার মো. শওকত আলীসহ তার সঙ্গী চারজন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাতির পিতার ভাষণ সমগ্র বাংলাদেশের পৌঁছে দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছে সুবেদার শওকত আলীসহ চার জন ধরা পড়ার পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি, শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। যে কোনও বাহিনীর জন্য মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে শৃঙ্খলা, চেইন অব কমান্ড। কখনও শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। অর্পিত দায়িত্ব মেনে চলবেন, চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২২ (সাবেক বিডিআর) উপলক্ষে মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানী ঢাকায় বিজিবি সদর দপ্তরের বীরউত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাহিনীর শৃঙ্খলা, চেইন অব কমান্ড সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উদ্বৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের সদস্যদের উদ্দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, “ঈমানের সাথে কাজ করো, সৎ পথে থেকে দেশকে ভালোবাস। এই দেশ আমাদের।” দেশ উন্নত হলে, আপনারা সবাই ভালো থাকবেন, উন্নত জীবন পাবেন। চিকিৎসায় পাবেন। এই কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের প্রদেশ ছিল। বাংলাদেশ যখন একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, সে দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে দেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারতেন। কিন্তু সেটা আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার যুদ্ধে বাংলাদেশ বিজিবি বাহিনীর সদস্যদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার যুদ্ধে ১২ হাজার সদস্য অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম, ৭৭ বীরপ্রতীক পদকে ভূষিত হন। এতো বেশি পদক বোধহয় আর কোনো বাহিনী পায়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৮১৭ জন সদস্য আত্মাহুতি দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের মাত্র ৫২ দিনের মাথায় বাংলাদেশ একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যায়। সেই সময় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

বিজিবি সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের প্রতি রয়েছে সীমান্ত রক্ষার মহান দায়িত্ব। সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান রোধ, আন্তঃসীমানা অপরাধরোধসহ নারী ও শিশু পাচার বন্ধ, সীমান্তবর্তী মানুষের জানমালের সুরক্ষা দেওয়া দায়িত্ব। আপনারা সে দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করে চলেছেন। সেই দায়িত্ব পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন, সেটাই আমরা চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিজিবি বাহিনীর সফলতার জন্য বিজিবি পুনর্গঠনের আওতায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছে। প্রয়োজনে নতুন আইনও পাস করি। একটি শক্তিশালী আধুনিক ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে বিজিবি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। এখন বিজিবি জল-স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। বিজিবি সংগঠন কাঠামোতে নতুন ইউনিট সৃষ্টির ফলে সুষ্ঠুভাবে সীমান্ত নিরাপত্তা দেওয়ার কাজ অনেক সহজ হয়েছে।

বিজিবিকে একটি বিশ্বমানের, আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভিলেন্স অ্যান্ড টেকনিক্যাল রেসপন্স সিস্টেম চালু করা হয়েছে। আধুনিক সরঞ্জামাদি সংযুক্ত হয় বিজিবির অভিযানে সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আনন্দবাজার/কআ

সংবাদটি শেয়ার করুন