ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সীমান্তে বন্যহাতি আতঙ্ক

সীমান্তে বন্যহাতি আতঙ্ক

নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া, পশ্চিমবিজয়পুর ও সদর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে বন্যহাতির দলের তাণ্ডব চালিয়ে ফসল ও ঘর-বাড়ির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি করেছে।

গত বুধবার ৭ ডিসেম্বর সন্ধার পর থেকে ভারত থেকে নেমে আসা হাতির দল গত ৩-৪ দিনে ২০ থেকে ২৫ টি ঘর-বাড়ির গুরিয়ে দিয়েছে এবং বহু জমির ফসল ও বাড়ির ধান খেয়ে সাবার করে দিয়েছে।

হাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে কেউ খোলা আকাশের নীচে, কেউ বা আবার ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ইতিমধ্যে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন পশ্চিম বিজয়পুর গ্রামের এক কৃষক। আগেও হাতির তান্ডবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, গত কয়েকদিন যাবৎ বন্য হাতির দল সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থান করছে সন্ধা হলেই নেমে আসে লোকালয়ে। বন্য হাতির ভয়ে আতঙ্ক গ্রস্থ হয়ে আছে সীমান্তবর্তী মানুষেরা। না পারছে তাদের ফসল রক্ষা করতে না পারছে তাদের ঘর-বাড়ি রক্ষা করতে। বর্তমানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মশাল জালিয়ে ফসল ও বাড়ি ঘর রক্ষার চেষ্টা করছে কিন্তু বন্য হাতির আক্রমণের সামনে দারতে পারছে না। গত ৪ দিনের বন্য হাতির তান্ডবে ২০ থেকে ২৫ টি বাড়ি তছনছ করেছে।  এছাড়াও ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে চাল,ডাল সবকিছুই খেয়ে সাবার করেছে।

পেটে ক্ষুধা ও আশ্রয়স্থল হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্তরা। অন্যদিকে বন্য হাতির তান্ডবে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে ৪ গ্রামের মানুষ। এদিকে ক্ষতি গ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ অর্থসহ কম্বল বিতরণ করেছেন ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ক্ষতিগ্রস্ত মনোয়ারা বেগম জানান, রাতে হঠাৎ বন্যহাতির একটি দল আমার বাড়িতে প্রবেশ করে। হাতিগুলো আমার বসত ঘরের খুঁটি,বেড়া, ভেঙে তছনছ করে ফেলে। বসত ঘরে থাকা হাঁড়ি-পাতিল, জামা-কাপড়সহ যাবতীয় আসবাবপত্র পিষে নষ্ট করে। তখন ঘরবাড়ি ফেলে তিন সন্তানাদি ও জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যায় আমরা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তান্ডব চালিয়েছে হাতির দল। শুধু তাই নয় ঘরে রাখা চাল ও ধান নষ্ট করেছে ক্ষুধার্ত হাতির দলটি। বর্তমানে আমাদের মাথা গোঁজার জায়গাটুকু নেই এখন।

কুল্লাগড়া ইউনিয়নের ২নং ইউপি সদস্য আব্দুল হামেদ বলেন, হাতিগুলো বাংলাদেশ সীমান্তের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে এবং রাত হলেই চলে আসছে লোকালয়ে এতে স্থানীয়া রয়েছে আতঙ্কে। বন্যহাতির দল লোকালয়ে প্রবেশ করে ধান,সবজি, গাছ-পালাসহ মানুষের ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

দুর্গাপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, বন্য হাতির দল ভবানীপুর গ্রামে হানা দিয়েছে গ্রামের প্রায় ২০০-২৫০ মণ ধানের ক্ষতি  করেছে।

বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম জানান, প্রতি বছরই বন্যহাতি খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে প্রবেশ করে জানমালের ক্ষতি করে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের বন বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়। বন বিভাগের আইন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, ভারতীয় বন্য হাতির দল লোকালয়ে প্রবেশ করে আড়াপাড়া ও পশ্চিমবিজয়পুর,ভবানীপুর সহ কয়েকটি গ্রামের ফসল,বাড়ি-ঘর ভাংচুর সহ ব্যাপক ক্ষতি করেছে। তাৎক্ষণিক ভাবে তাদের ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামতের জন্য ২ হাজার টাকা ও শীতবস্ত্র কম্বল দিয়েছি। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন