সরকারি কর্মকর্তারা জনগণকে বন্ধু মনে করলে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হতো না বলেও মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, সচিব, সরকারি কর্মকর্তারা জনগণকে বন্ধু মনে করে না। তারা নিজেদের অনেক বড় কিছু মনে করেন।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মো. আব্দুর রহমানকে উদ্দেশ করে এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের প্রতিনিধি হিসেবে উপ-সচিব মো. আব্দুর রহমান ১৪ পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাদের দায়ের করা এক আদালত অবমাননার মামলার তলবে হাজির হন।। ৭ বছরেও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাদের আবেদন নিষ্পত্তি না করায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ৭ বছরে একটি আবেদন নিষ্পত্তি করতে পারলেন না। পক্ষে-বিপক্ষে যাই হোক আদালতের আদেশের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আবেদনটি অনেক আগেই নিষ্পত্তি করা উচিত ছিল। উপ-সচিবকে প্রশ্ন রেখে আদালত বলেন, আপনিও তো সরকারি কর্মকর্তা। আপনার কোনো আবেদন যদি কোনো সচিব নিষ্পত্তি না করতেন তাহলে কেমন লাগত?
জনগণই যে সব ক্ষমতার উৎস এটা সচিবদের মনে রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন আদালত। সচিবালয়ে বসে নিজেদের দায়িত্ব ভুলে গেলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির স্বীকার হয়। সচিবরা আদালতের আদেশ মানেন না। আবার তাদের তলব করলে বিব্রতবোধ করেন। এসময় উপ-সচিবকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, আপনি নিজেও সচিবের রুমে সহজে প্রবেশ করতে পারবেন না।
আগামী ১০ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করে আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী। অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের সব পৌরসভায়-অ্যাকাউন্ট ও অডিট বিভাগের পরিবর্তে হিসাব ও নিরীক্ষা বিভাগ গঠন করার জন্য দেশের বিভিন্ন পৌরসভায় অ্যাকাউন্টস অফিসার পদে কর্মরত ১৪ জন অফিসার বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দরখাস্ত করেছিলেন। কিন্তু বারবার যোগাযোগ করার পরও সংশ্লিষ্ট দপ্তর অ্যাকাউন্টস অফিসারদের দাখিল করা আবেদন নিষ্পত্তি করার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে ওই ১৪ জন অফিসার বাদী হয়ে হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিটের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর স্থানীয় সরকার সচিব, দাখিল করা দুটি দরখাস্ত কোনো ব্যর্থতা ছাড়া এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করে। আপিল বিভাগ ২০২০ সালের ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের সিভিল পিটিশনটি খারিজ করেন।
ফলে দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও আদালতের আদেশ না মানায় স্থানীয় সরকার সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা রুজু হয়।
আনন্দবাজার/কআ