বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিটুমিন কারখানায় ভয়াবহ আগুন

বিটুমিন কারখানায় ভয়াবহ আগুন
  • দেড় কোটি টাকার ক্ষতি

নীলফামারীর সৈয়দপুরে আবাসিক এলাকায় প্রতিষ্ঠিত একটি পাথর, সিমেন্ট ও বিটুমিন মিক্সার ফ্যাক্টরিতে বয়লারে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এতে তিনটি বয়লার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে ফ্যাক্টরি সংলগ্ন দুইটি মার্কেটসহ শতাধিক আবাসিক ঘরবাড়ি। সম্পূর্ণরুপে ভস্মিভুত হয়েছে ইলেক্ট্রিক মোটর, বার্নার, বৈদ্যুতিক তার, বিপুল পরিমাণ বিটুমিন, গ্রিস ওয়েল। এতে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

গতকাল বুধবার সকালে উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ মতির মোড় এলাকায় সৈয়দপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক সংলগ্ন এম আর আর কনস্ট্রাকশন ফার্মে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সৈয়দপুর, নীলফামারী উত্তরা ইপিজেড ও তারাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ১ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

জানা যায়, প্রতিদিনের মত বুধবার ভোরেও মেশিন চালু করা হয়। বয়লারের চারটি ট্যাঙ্কই বিটুমিন ও সিøস ওয়েলে পরিপূর্ণ ছিল। বেলা ১১টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় বার্ণার সেক্টরে। এতে এস ফল্ট প্রোজেক্ট মেশিনে আগুন ধরে যাওয়ায় দাহ্য পদার্থ ভরপুর ট্যাঙ্কও আগুনময় হয়ে যায়। পরে চারটি বয়লারেই মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। অতিরিক্ত তাপে বিটুমিন ট্যাংকেও আগুন লাগলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ একেবারে অবৈধভাবে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এরফলে প্রতিনিয়ত ব্যাপক শব্দ ও পরিবেশ দূষণ ঘটছে। প্রতিটি বাসা ও দোকানসহ গাছপালা পাথরের ধূলা আর বয়লারের কালো কালিতে আচ্ছন্ন।

ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেশিন চালানোয় চরম অস্বস্তিতে বসবাস করতে হয়। রাতে প্রচণ্ড শব্দে যেমন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তেমনি সারাদিন ধূলো, ধোঁয়া আর কালির কারণে স্বাভাবিক চলাচলসহ কাজকর্ম করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুনঃ  সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা, বহিষ্কারের দাবি

এজন্য ব্যবসায়ী ও এলাকার সচেতন লোকজন ফ্যাক্টরিটি অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করলেও কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি। এতবড় একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে এত দাহ্যপদার্থ থাকার পরও অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া উপরদিয়ে হাইভোল্টেজের বিদ্যুতের তার প্রবাহিত। সেক্ষেত্রেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। একারণেই এমন ভীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন ধলাগাছবাসী।

বাতাস বিপরীতমুখী হওয়ায় এবং ফায়ার সার্ভিস দ্রুত আসায় অল্পের জন্য বয়লার সংলগ্ন মার্কেটে আগুন লাগেনি। ফলে শত শত মানুষ রক্ষা পেয়েছে। তারপরও ভয়ে অনেকেই মালামাল নিয়ে ঘরবাড়ি ও দোকান ছেড়ে খোলামাঠে অবস্থান নেয়। এতে বেশকিছু জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে।

ফ্যাক্টরি মালিক রাজনৈতিক ও অর্থের দাপটে ঝ্ুঁকিপূর্ণ ও জনগণের জন্য ভোগান্তির কারণ হওয়া সত্বেও আবাসিক এলাকা থেকে সরাচ্ছে না। এতে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই ঘটনার পরও যদি ফ্যাক্টরি বন্ধ করা না হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন করতে বাধ্য হবে এলাকাবাসী। তাই তারা এব্যাপারে প্রশাসন সহ জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ দাবী করেছেন।

ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ফলে প্রচুর কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চারপাশ। বহুদূর থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখে ছুটে আসে হাজার হাজার মানুষ। মহাসড়কসহ পাশের মার্কেটে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। আশেপাশের মানুষেরা চরম আতঙ্কিত হয়ে ঘর ও দোকান থেকে মালামাল বের করে দিক বিদিক ছুটাছুটি শুরু করে।

প্রোজেক্ট ম্যানেজার শহিদুজ্জামান বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তবে ভস্মিভুত দুইটি অটো বয়লারের মূল্য প্রায় ৯০ লাখ। ডিজেল বার্ণার ট্যাংক দুইটাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর মূল্য ৩০ লাখ। এছাড়া ২০ হাজার লিটার বিটুমিন প্রায় ২২ লাখ টাকা। ইলেকট্রিক মোটর, বৈদ্যুতিক সার্কিট বোর্ডসহ তার ও অন্যান্য সরঞ্জাম এবং মালামাল মিলে মোট ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  পার্লার, মার্কেট ও অনলাইনে নকল প্রসাধনী রমরমা ব্যবসা

ফ্যাক্টরি ম্যানেজার শাহিন হোসেন বলেন, মেশিন বন্ধ ছিল। কি কারণে আগুন লাগলো জানিনা। তবে ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট থেকে হতে পারে। ভারত থেকে বিশেষজ্ঞ দল এসে আগুনের সূত্রপাতের কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করবে। পুরো ফ্যাক্টরিতে প্রায় ৭ কোটি টাকার অবকাঠামো ও মেশিনপত্র আছে।

ফায়ার সার্ভিসের জেলা কর্মকর্তা (ডিএডি) এনামুল হক জানান, ফ্যাক্টরি মালিক পক্ষের দাবী ন্যুনতম ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত বিষয়ে তাদের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। বয়লারের বিষ্ফোরণ ঘটলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ ও ক্ষতিকর হতে পারতো।

সংবাদটি শেয়ার করুন