বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরীবের চাল অবৈধ মজুত

গরীবের চাল অবৈধ মজুত
  • আ. লীগ অফিসে চাল মজুতে অনিয়ম তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি

নীলফামারীর ডিমলায় সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার মেহের আলীর বিরুদ্ধে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সরকারি চাল অবৈধভাবে মজুত করার অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার সকালে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে খাদ্য পরিদর্শক এনামুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় নাউতারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে স্থানীয় ওএমএস ডিলার মেহের আলীর অবৈধভাবে মজুত করা ১১০ বস্তা চাল পাওয়া যায়। চালের পরিমাণ ৩ হাজার ৩০০ কেজি। এ ঘটনায় গত বুধবার দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।

খাদ্য গুদাম সূত্র জানায়, হতদরিদ্রদের মাঝে সরকারি ন্যায্যমূল্যে চাল বিতরণের লক্ষ্যে চলমান কর্মসূচিতে নাউতারা ইউনিয়নের ডিলার মেহের আলী গত অক্টোবর মাসে উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে ১২ মেট্রিক টন ৪২০ কেজি চাল উত্তোলন করেন। এর মধ্যে সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করে অবশিষ্ট ৩ হাজার ৩০০ কেজি চাল উপজেলা কর্তৃক নির্ধারিত স্থান পরিবর্তন করে তিনি নাউতারা বাজারের ইউনিয়ন আওয়ামী কার্যালয়ে তার ব্যক্তিগত গুদামে ১১০ বস্তা চাল মজুত করেন। এ বিষয়ে লিখিত কোনো আবেদন না করেই নিজের ইচ্ছেমত অন্যস্থানে চাল মজুত করেন মেহের। খবর পেয়ে খাদ্য পরিদর্শক এনামুল হক সরেজমিনে গিয়ে অনিয়মের সত্যতা পান। পরে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ডিলার মেহের আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন খাদ্য পরিদর্শক।

এ চাল দরিদ্র মানুষের মধ্যে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এলাকাবাসী জানায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার মেহের আলীর নির্ধারিত গুদামে কোনো চাল নেই। গুদাম ছাড়াই তিনি কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে  ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে রাতের আধারে এসব চাল মজুত করেন। বিষয়টি জানাজানির পর স্থানীয়রা উপজেলা প্রশাসনকে জানান।

আরও পড়ুনঃ  ২৫ মার্চ সমগ্র দেশ ১ মিনিট অন্ধকার থাকবে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, প্রতিবার চাল উত্তোলনের সময় ডিলার মেহের আলী খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে কৌশলে চাহিদার বেশি চাল উত্তোলন করেন। বিতরণ শেষে অধিক লাভের আসায় অবশিষ্ট চাল রাতারাতি ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ডিলার মেহের আলী বলেন  বলেন, আমি ব্যস্ত আছি, একটু পরে ফোন দিচ্ছি। পরে একাধিক বার ফোন করেও কোনো সাড়া মেলেনি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক এনামুল হক জানান,  অক্টোবর মাসে সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে চালগুলো সংগ্রহ করেছিলেন মেহের আলী। তথ্যগত ভুলের কারণে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বরাদ্দ পান তিনি। তবে, সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণের পর অবশিষ্ট চালের বিষয়ে আমাকে না জানিয়ে অবৈধভাবে মজুত করে রেখেছে। নির্ধারিত সময়ে কোনো ডিলারের বিতরণকৃত চাল শেষ না হলে অবশিষ্ট চালের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।

নাউতারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাফফর মিয়া বলেন, আমি ঢাকায় ছিলাম বিষয়টি এখনও জানিনা। তবে ডিলারের চাল আওয়ামী অফিসে থাকার কথা নয়। এ ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হারুন অর রশিদ বলেন, বিতরণ শেষে ডিলারদের গুদামে চাল রাখার নিয়ম নেই। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, সরকারি চাল মজুতের ঘটনায় দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন