বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থ আত্মসাতের মামলা তিন মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন কোনো প্রকার ব্যর্থতা ছাড়া আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। উক্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর উচ্চ আদালতে হলফনামা দিতেও আদেশে বলা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ দিন তিনটি মামলায় বেসিক ব্যাংকের জিএম মোহম্মদ আলীর জামিন প্রশ্নে রুল খারিজ করে দেন আদালত।
আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন।
উক্ত ঘটনায় করা অর্ধশতেরও বেশি মামলার মধ্যে ১২ মামলার আসামি ব্যাংকটির সাবেক জিএম মোহাম্মদ আলী। এর মধ্যে তিন মামলায় জামিন চেয়েছেন তিনি। পরে জামিন শুনানিতে গত ৮ নভেম্বর হালনাগাদ তথ্য চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে এ প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। সেখানে বলা হয়, বেসিক ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে প্রায় ২০৭৭ কোটি ৩৪ লাখ ২ হাজার ৯৯১ টাকা যা সুদসহ ২৫৯০ কোটি ৪৯ লাখ ৯১ হাজার ৪৫৩ টাকা আত্মসাতের দায়ে দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে মোট ৫৬টি মামলা দায়ের করে।
সেসব মামলায় ৮২ জন ঋণ গ্রহীতা ছাড়াও বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফকরুল ইসলাম, ডিএমডি ফজলুস সোবহান, সাবেক ডিএমডি শেখ মঞ্জুর মোরশেদ, জিএম এ. মোনায়েম খান, জিএম মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী চৌধুরীসহ ২৭ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয। বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখা, প্রধান শাখা, দিলকুশা শাখা এবং শান্তিনগর শাখাসহ মোট চারটি শাখার ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয়ে গুলশান থানায় ২৩টি, মতিঝিল থানায় ১২টি ও পল্টন থানায় ২১টিসহ মোট ৫৬ টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় বেসিক ব্যাংক কর্মকর্তা ২৭, ব্যবসায়ী ৮২ ও বেসরকারি সার্ভেয়ার ১১ জনসহ মোট ১২০ জনকে আসামি করা হয়। এরমধ্যে মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মামলাগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ তদন্তাধীন আছে। মামলার তদন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো—আত্মসাৎকৃত অর্থ সম্পূর্ণরূপে নগদে উত্তোলনের মাধ্যমে টাকার অবস্থান গোপন করা হয়েছে। মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের শনাক্তকরণ ও তাদের জবানবন্দী গ্রহণ (১৬১ ধারায়) কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সব সাক্ষীর কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বর্ণিত মামলায় আলামত প্রচুর ও ব্যাংকের বিশাল পরিমাণ কাগজপত্র থেকে প্রকৃত সব আলামত শনাক্ত করা সময় সাপেক্ষ। এছাড়া প্রকৃত আসামি শনাক্তের প্রক্রিয়াটিও এ মামলায় বেশ জটিল। এছাড়া মামলার প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহের জন্য মালয়েশিয়ায় এমএলএআর করা হয়েছে। সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও আলামত এখনও পাওয়া যায়নি।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বদলি সূত্রে একাধিকবার তদন্তকারী কর্মকর্তাও পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে মামলাগুলোর তদন্ত কাজ এগিয়ে চলছে। আসামি ও আলামত শনাক্ত করা, সাক্ষীদের জবানবন্দী গ্রহণ ও এমএলএআর’র পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশ থেকে মামলার প্রয়োজনীয় আলামত পাওয়া সাপেক্ষে এবং প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শেষ করে যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, মোট ৫৬টি মামলায় আত্মসাৎকৃত অর্থের মধ্যে ১১৫ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা উদ্ধার বা ব্যাংকে জমা করা হয়েছে।
আনন্দবাজার/কআ
