ঢাকা | সোমবার
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মা-বাবার পরিচয় না থাকলেও নিবন্ধন পাবে পথশিশুরা

মা-বাবার পরিচয় না থাকলেও নিবন্ধন পাবে পথশিশুরা

দেশের ১৬ লাখ পথশিশুকে জন্মনিবন্ধন সনদ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্মনিবন্ধনের ব্যবস্থা নিতে সরকারের পক্ষ থেকে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তারও অগ্রগতি প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছিল সে রুলে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ (জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন) এরই প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মা-বাবার পরিচয় না থাকলেও নিবন্ধন পাবে পথশিশুরা।

প্রসঙ্গত, রিট মামলায় বাংলাদেশের সব পথশিশুর জন্মসনদ ইস্যুকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনবহির্ভূত ঘোষিত হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। বিদ্যমান জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন ২০০৪ এবং জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিধিমালা ২০১৮ অনুসারে বাংলাদেশের সব পথশিশুর জন্মসনদ ইস্যুকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বিবাদীদের কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, রিটে তাও জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন ও বিধি অনুযায়ী বাংলাদেশের সব পথশিশুর জন্মসনদ ইস্যুকরণে গৃহীত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের ব্যাপারে বর্ণনা করে আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের পথশিশুদের জন্মসনদ প্রদানে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের গৃহীত পদক্ষেপ নিম্নরূপ

এক. জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন, ২০০৪-এর ধারা ৫(১)-এ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, লিঙ্গ নির্বিশেষে সব নাগরিকের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনে কোনও বৈষম্য করা হয়নি বা কোনও বিশেষ শ্রেণিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সব নাগরিকের অধিকার। পথশিশু এতিম, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, পিতৃ বা মাতৃপরিচয়হীন, পরিচয়হীন, বেদে, ভবঘুরে বা ঠিকানাহীন যে-ই হোক না কেন, কাউকেই নিবন্ধন থেকে বাদ দেওয়া যাবে না বা তার নিবন্ধন অস্বীকার করা যাবে না।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৩(গ) মোতাবেক, ‘কোনও ব্যক্তি এতিম, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, পিতৃ বা মাতৃপরিচয়হীন, পরিচয়হীন, বেদে, ভবঘুরে, পথবাসী বা ঠিকানাহীন বা যৌনকর্মী হওয়ায় নিবন্ধক তথ্যের ঘাটতির কারণে উক্ত ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যুনিবন্ধন প্রত্যাখ্যান করিতে পারিবেন না এবং এরূপ ক্ষেত্রে যে সকল তথ্য অসম্পূর্ণ থাকিবে সে সকল স্থানে ‘‘অপ্রাপ্য’’ শব্দ লিখিয়া জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন করিতে হইবে’। বিধি ৮(ঙ) মোতাবেক, রাস্তায় বা উন্মুক্ত স্থানে জন্ম বা মৃত্যুর ক্ষেত্রে উক্ত রাস্তা বা উন্মুক্ত স্থান যে থানার অধীন সেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জন্ম বা মৃত্যুর তথ্য পাঠাবেন।

‘জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন, ২০০৪-এর ধারা (৪)-এ নিবন্ধক ও নিবন্ধকের অধিক্ষেত্র সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিবন্ধক তার অধিক্ষেত্রের মধ্যে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন, ২০০৪-এর ধারা (৬) এবং জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিধিমালা ২০১৮-এর বিধি (৪) মোতাবেক তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন এবং তার অধিক্ষেত্রের সকল নাগরিকের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করবেন। কোনও নিবন্ধক যদি এই দায়িত্ব পালন করতে অবহেলা করেন বা কাউকে পিতা-মাতার নিবন্ধন বা অন্য কোনও তথ্যের অপ্রাপ্যতার জন্য নিবন্ধন না করেন, তাহলে তা হবে আইন ও বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন ও বিধি মোতাবেক পথশিশুদের জন্ম সনদ প্রদানে কোনও বাধা নেই, বরং সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে।’

‘পথশিশুদের জন্ম নিবন্ধন করতে সফটওয়্যারের সিস্টেমগত কোনও বাধা আগেও ছিল না, এখনও নেই। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক কার্যালয়ের অথরাইজড ইউজার নিজে তথ্যসমূহ সফটওয়ারে এন্ট্রি করবেন এবং যাচাই-বাছাইপূর্বক নিবন্ধক নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন।

রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কর্তৃক দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলাতে আয়োজিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এসব বিষয়ে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়। এ অফিস কর্তৃক ইউনিসেফ বাংলাদেশ এবং এনজিও কর্তৃক পরিচালিত ক্যাম্পেইনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয় এবং পথশিশুদের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিনা ফিসে নিবন্ধন দেয়ার জন্য নিবন্ধকদের বলা হয়।’

দুই. পথশিশুসহ, নাম-পরিচয়বিহীন ব্যক্তির জন্মনিবন্ধনের মতো বিশেষ ধরনের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে করণীয় ও অন্যান্য উত্থাপিত কারিগরি সমস্যার সমাধানের জন্য প্রতি সপ্তাহের রবিবার ও বৃহস্পতিবার অনলাইনে (জুম) মাঠ পর্যায়ের নিবন্ধকদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।

তিন. বেবিহোম, সেফহোম/ছোটমনি নিবাসে আশ্রিত পথশিশু ও নিবাসীদের জন্মনিবন্ধনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে পত্র প্রদান।

চার. কোনও ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনকালে বার্থ অ্যান্ড ডেথ রেজিস্ট্রেশন ইনফরমেশন সফটওয়্যার (বিডিআরআইএস) হতে ২০০১ সালের ১ জানুয়ারির পরে জন্মগ্রহণকারী সব ব্যক্তির জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর প্রদানের বাধ্যবাধকতাটি বর্তমান বিডিআরআইএস সফটওয়্যারের সেটিংস হতে গত ২৬ জুলাই তুলে দেওয়া হয়েছে। বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার পর থেকে গত ২১ নভেম্বর পর্যন্ত পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন তথ্য (বিআরএন) ব্যতিরেকেই নিবন্ধন হয়ে জন্মনিবন্ধনের মোট সংখ্যা ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭৫৭ জন।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন সারা দেশের ১৬ লাখ পথশিশুকে জন্মনিবন্ধন সনদ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

মামলার বিবাদীদের এ রুলে আরো যে বিষয়গুলো জানতে চাওয়া হয়: সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্মনিবন্ধনের ব্যবস্থা নিতে সরকারের পক্ষ থেকে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তার অগ্রগতি প্রতিবেদন তিন মাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।

এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল।

প্রসঙ্গত, রাজধানী ঢাকার দুই লাখসহ সারা দেশের ১৬ লাখ পথশিশুকে জন্ম নিবন্ধন দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে গত ১২ জুন রিটটি দায়ের করা হয়। স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট সংগঠনের পক্ষে ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল এই রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সচিব, জন্মনিবন্ধন অধিদফতর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদে

আনন্দবাজার/কআ

সংবাদটি শেয়ার করুন