ঢাকা | সোমবার
১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাল স্বাক্ষরে বেতন

জাল স্বাক্ষরে বেতন
  • নিয়োগ বাণিজ্যে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
  • শতাধিক অভিভাবক সদস্যের লিখিত অভিযোগ

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির জাল স্বাক্ষরে বেতন উত্তোলন, পকেট কমিটিতে নিয়োগ বাণিজ্যসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে এক প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অভিযোগ দেয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। রাজনৈতিক দাপটে অভিযোগ দাবিয়ে রাখছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। সর্বশেষ ওই শিক্ষককের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে তার অবৈধ নিয়োগবাণিজ্য আটকে দেয়া হয়েছে। এর আগে প্রায় শতাধিক ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন (দ্বীপচর) চরমোন্তাজ ইউনিয়নের এ ছাত্তার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমীনের স্বেচ্ছাচারিতায় ভেঙে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা। এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

তারা অভিযোগে বলছেন, ১৯৯২ সাল থেকে রুহুল আমীন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করলেও এক দিনও ক্লাসে যাননি। ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক হয়। অথচ ২০০৫ সালের ১০ মার্চ অবৈধভাবে মু. মনিরুজ্জামানকে বাণিজ্যিক সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। সাত মাসের মাথায় মনিরুজ্জামান এমপিও ভুক্ত হন। অথচ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাণিজ্য শাখা পাওয়ার বিধান নাই। এছাড়াও ছেলে মো. রাকিব বেলালকে প্যারা শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার্থীর অভিভাবকের কাছ থেকে বেতন বাবদ চাঁদা তোলেন। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ মিয়া আহ্বায়ক থাকা অবস্থায় বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ.কে সামসুদ্দিন আবু মিয়াকে সভাপতি দেখিয়ে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ, ৬৮ হাজার, ১০ টাকা উত্তোলন করেন প্রধান শিক্ষক।

একইভাবে ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়াকে আহ্বায়ক করে ছয় মাসের ব্যবস্থাপনা কমিটি করেন প্রধান শিক্ষক। দুই মাস না যেতেই হানিফ মিয়ার স্বাক্ষর জাল করে নতুন কমিটির তফসিল ঘোষণা করে তিনি। পরে রাঙ্গাবালী উপজেলা একাডেমি সুপারাভাইজার অনাদি কুমার বাহাদুরকে প্রিজাইডিং করে একটি পকেট কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটিতে ইউপি চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন আবু মিয়া সভাপতি বানিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন প্রধান শিক্ষক। পরে ওই নিয়োগের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন অভিভাবক সদস্য জনৈক জসিম মোল্লা। এতে আটকে যায় সভাপতি-প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বাণিজ্য।

অভিযোগে আরও বলা হয়, উপবৃত্তির তালিকায় নাম ওঠাতে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩শ টাকা নেন। শিক্ষার্থীর পরিচয়পত্র দিতে প্রতিজনের কাছ থেকে দুইশ টাকা করে প্রায় ৭শ শিক্ষার্থীর থেকে ১ লাখ, ৪০ হাজার টাকা আদায় করেন। বই বিতরণকালে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নেন। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে দুদফা কেন্দ্র ফি এবং পরীক্ষার বোর্ড ফি বাবদ ৫শ টাকা নেন। জেএসসি, এসএসসি মূল সনদ ও একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট প্রদানে ১ হাজার টাকা করে নেয়া হয়।

বিভিন্ন পরীক্ষার নামে বে-সরকারি প্রকাশনীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের বই কিনতে বাধ্য করেন শিক্ষার্থীদের। বিনামূল্যে প্রকাশনীর দেয়া ব্যাজ ও সিলেবাস শিক্ষার্থীকে দিতে টাকা নেন তিনি। বৃত্তি ও উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। বিদ্যালয়ের তহবিল ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে স্কুলের ভবনের দ্বিতীয় তলায় কক্ষ সম্প্রসারণ করে বসবাস করছেন। এছাড়াও পুরোনা বই ফেরত নিয়ে তিনি গোপনে বিক্রি করেন। বিভিন্নখাতে আয়কৃত অর্থ শিক্ষক-কর্মচারীদের বণ্টন না করে নিজেই আত্মসাৎ করেন।

মামলার বাদী ও অভিযোগকারীরা বলেন, প্রকাশনীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ওই কোম্পানির বই কিনতে শিক্ষার্থীদের চাপ দেয়া হয়। ২০০৫ সালে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হাজি আব্দুল ছাত্তারের মৃত্যুর পরে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়টি নিজের কব্জায় নেন। প্রধান শিক্ষক রুহুল আমীন রাঙ্গাবালী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু মিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেন না।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন মামলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উদ্দেশ্যে প্রণোদিত হয়ে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তবে বাকি অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন