ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বছরে আড়াই লাখ কোটি টাকা কর ছাড় দিতে হচ্ছে

বছরে আড়াই লাখ কোটি টাকা কর ছাড় দিতে হচ্ছে

সংসদ সদস্যদের অনেকেই ব্যবসায়ী হওয়ায় তারা কর ছাড়ের সুবিধা নিতে চাইছে। এসব কারণে বছরে আড়াই লাখ কোটি টাকা কর ছাড় দিতে হচ্ছে। এসব রাজনৈতিক অর্থনীতির স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণেই কাঙ্খিত রাজস্ব আয় হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ।

শনিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে (ইআরএফ) সেমিনার কক্ষে আয়োজিত ইউজিং ডাইরেক্ট ট্যাক্সসন টু টেকলি ইনকোয়ালিটি অ্যান্ড বুস্ট রেভিনিউ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ইআরএফ এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রেগেশন ফর ডেভলপমেন্ট (র‌্যাপিড)। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র‌্যাপিড চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক।

নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, এনবিআরের কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। রাজনৈতিক অর্থনীতির কারণে এনবিআর রাজস্ব আয়ে পিছিয়ে আছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে এখন বড় বাধা রাজনৈতিক অর্থনীতি। বিভিন্ন কারনে অনেক খাতেই কর অবকাশ সুবিধা দিতে হচ্ছে। বিশেষ কর হার আরোপ করতে হচ্ছে। তাছাড়া সংসদ সদস্যদের অনেকেই ব্যবসায়ী হওয়ায় তারা কর ছাড়ের সুবিধা নিতে চাইছে। এসব কারণে বছরে আড়াই লাখ কোটি টাকা কর ছাড় দিতে হচ্ছে। এসব রাজনৈতিক অর্থনীতির স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণেই কাঙ্খিত রাজস্ব আয় হচ্ছে না। এ রাজস্ব আয় বাড়াতে সংস্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে এনবিআরের জোন সংখ্যা দিয়ে না করে, খাত ভিত্তিক করে রাজস্ব আয় বাড়াতে জোর দিতে হবে।

আমাদের প্রত্যক্ষ কর আসে ৩৫ এবং পরোক্ষ কর আসে ৬৫ শতাংশ জানিয়ে নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, সরকার এখন প্রত্যক্ষ কর ৭০ শতাংশ এবং পরোক্ষ কর ৩০ শতাংশ করার লক্ষ্য নিয়েছে। যে দেশগুলো প্রত্যক্ষভাবে কর বেশি আদায় করতে পারে, সেই দেশের আয় বৈষম্য অনেক কম। কিন্তু আমাদের দেশে প্রত্যক্ষ কর জিডিপির ২ দশমিক ৬ শতাংশ। ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও সরকারি ব্যয় অত্যন্ত কম। প্রত্যক্ষ কর টাকার অংকে বেড়েছে কিন্তু জিডিপির অর্থে বাড়েনি। আমাদের চেয়ে ভারত অনেক বেশি জিডিপির ট্যাক্স আদায় করছে। আমাদের ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত কম। ২০৩১ সালের মধ্যে বাড়িয়ে ১৭ ভাগ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর ওপরে জোর দিয়ে র‌্যাপিড চেয়ারম্যান ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের কর জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশ। এটা সারাবিশ্বে সর্বনিম্ন। এর প্রধান কারণ প্রত্যক্ষ কর অনেক কম। এটা বাড়াতে হবে। বর্তমানে পরোক্ষ কর ৬৫ শতাংশ এবং প্রত্যক্ষ কর ৩৫ শতাংশ। এটা ঠিক নয়। তাই বাড়ানোর লক্ষে সরকার আগামীতে প্রত্যক্ষ কর ৭০ শতাংশ ও পরোক্ষ কর ৩০ শতাংশে আনার উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশে দুটি সমস্যা ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং সরকারি ব্যয় জিডিপির অংশ হিসাবে অনেক কম জানিয়ে আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রত্যক্ষ কর অনেক কম। তবে প্রত্যক্ষ কর আগের চেয়ে বেড়েছে। জিডিপির অনুপাতে ও পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় কম। ভারত, ভুটান, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশে প্রত্যক্ষ কর থেকে সরকারের আয় বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি।

এনবিআর সদস্য (কর জরিপ ও পরিদর্শন) মাহমুদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাদী বর্তমান সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য অনেক বেশি। বিশ্বায়নকে মাথায় রেখে আমাদের প্রত্যক্ষ কর বাড়িয়ে পরোক্ষ কর কমিয়ে আনতে কাজ করছে এনবিআর। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইয়াজদানী খান বলেন, ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটের আকারের তুলনায় জিডিপির সাইজ অনেক কম। এই ব্যবধানটা বেশি হওয়ায় আমাদের কাজটা বেড়ে যায়। সেকারণে ব্যবসায়ীদের পাইওনিয়ার হতে হবে।

অগ্রিম আয়কর পপুলার কনসেপ্ট মন্তব্যে করে তিনি বলেন, এজন্য একটাই সমাধান এনবিআরকে অটোমেশনে যেতে হবে। এনবিআরের ট্যাক্স পেয়ার সার্ভিস উইং নেই, এটা আমাদের দুর্বলতা, অটোমেশনের পাশাপাশি সার্ভিস উইং তৈরি করা। এটার জন্য এনবিআরকে আলাদা জোন করতে হবে। করপোরেট ট্যাক্স বাড়ানো ঠিক না। তাদের অনেকগুলো ট্যাক্স দিতে হয়, এফডিআই আমাদের বেশি বেশি আনতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এনবিআরকে রুল ও রেগুলেশন নিয়ে ভাবতে হবে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইজদানী বলেন, জিডিপির তুলনায় বাজেটের আকার ছোট। আবার রাজস্ব আয় কম থাকায় বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকারকে বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। রাজস্ব সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকা স্বত্বেও কর জিডিপি অনুপাতের অনেক কম। এ থেকে উত্তরণে সমাধানে এনবিআরের অটোমেশন এবং করদাতার সেবা উইং তৈরি করা উচিত। নতুন নতুন ব্যবসা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আবাসন, ফেসবুক, আমাজন ও ফুডপান্ডার মতো নতুন ব্যবসার প্রসার হচ্ছে। সেখান থেকে সরকার কাঙ্খিত কর পায় না। এজন্য করনীতি সংস্কার করতে হবে।

প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, অফিস কক্ষে বসে মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি না করে জনগণের কাছে যেতে হবে। যাতে তারা কর দিতে উৎসাহী হয়। তাদের বোঝাতে হবে। কর না দিলে সরকারি সুযোগ সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে।

সেমিনারে ইআরএফের সভাপতি শারমীন রিনভী বলেন, প্রতিনিয়ত দেশে ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। এটা কমানো জরুরী। এ লক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। সরকারের কাছে আশা করছি, যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে এ বৈষম্য কমিয়ে আনবে।

আনন্দবাজার/কআ

সংবাদটি শেয়ার করুন