আনলো বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল
- মাসে তিন হাজার টাকা জমায় মিলবে স্কিম
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্লু-সিপ নামে একটি প্রোডাক্ট বাজারের নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল। প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা জমা করে বিনিয়োগকারী এই স্কিম নিতে পারেন। স্কিমের বিনিয়োগ দিয়ে প্রতিমাসে কেনা হবে মৌলভিত্তিক শেয়ার। ধারাবাহিক ক্রয়ের মাধ্যমে সেরা গড় মূল্য তৈরি হবে। যা পরবর্তীতে মেয়াদান্তে ভালো লাভ দিবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বিজয়নগরে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নলিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) নিজস্ব কার্যালয়ে মিট দ্যা প্রেসে ব্লু-সিপ স্কিমের বিষয়ে এমন কথা জানাল বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটালের কর্মকর্তারা। সংবাদ সম্মেলনে ব্লু-সিপ বা ব্লু সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্লান সম্পর্কে তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল।
ব্লু-সিপ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কায়সার হামিদ বলেন, তিন বছর বা তার চেয়ে বেশি মেয়াদের জন্য প্রতি মাসে একজন বিনিয়োগকারী অর্থ বিনিয়োগ করবেন যেকোনো পরিমাণের। মেয়াদ শেষে তিনি লাভসহ তুলে নিবেন। এর বাইরে যেকোনো সময় বিনিয়োগ তুলে নিতে পারবেন যেকেউ। সেবা ফি বছরে ৩ শতাংশ।
দক্ষ বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিচালিত হবে ব্লু-সিপ জানিয়ে কায়সার হামিদ বলেন, স্বল্প বিনিয়োগকারীদের জন্য বর্তমানে কেউ গবেষণামূলক তথ্য দিয়ে সহায়তা করে না। এই স্কিম পরিচালনা করতে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হয়েছে। যারা সিদ্ধান্ত নিয়ে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে থেকে ব্লু-চিপের তথ্য নিয়ে ব্লু-সিপ স্কিম গঠন করা হবে। প্রতিমাসে সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা জমা করে বিনিয়োগকারী এই স্কিম নিতে পারবেন। মেয়াদ হবে ৩ থেকে ১০ বছর।
ব্লু-সিপ স্কিমে ভালো ফল আসবে মন্তব্যে করে কায়সার হামিদ বলেন, পুঁজিবাজারের গত ৫ বছরের ব্লু-চিপ কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি তথ্য ভাণ্ডার তৈরি হয়েছে। যা সফটওয়্যার দিয়ে পরিচালিত হবে। গত ৬ মাস ধরে আমরা ব্লু-সিপ স্কিম পরিচালনা করে ভালো ফল পেয়েছি। আশা করছি, বিনিয়োগকারীরা ভাল ফল পাবে।
পুঁজিবাজারে যারা বিনিয়োগ করেন তাদের অধিকাংশই অনভিজ্ঞ জানিয়ে এমডি বলেন, এমনকি অভিজ্ঞ বলে দাবি করা ব্যক্তিরাও ততটা বোঝেন না বলেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। এমন সমস্যার সমাধান করতেই সত্যিকার গবেষকদের সমন্বয়ে এই প্রোডাক্টটির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
প্রোডাক্টটির বিশেষত্ব বোঝাতে গিয়ে কায়সার হামিদ বলেন, সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের মধ্যে একটা বড় ধরনের পার্থক্য আছে। বাংলাদেশে সঞ্চয়ের সুবিধাগুলো খুব ব্যাপকভাবে প্রচলিত এবং কাস্টমারদের কাছে সুপরিচিত। যেমন সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক ডিপোজিট, পোস্টাল সেভিংস সার্টিফিকেট। কিন্তু বিনিয়োগের জায়গাতে সীমিত সুযোগ আছে। বিনিয়োগ বলতে আমরা সাধারণত বুঝি যেটা মূল্যস্ফিতি শুধু সমন্বয় করে না। ভবিষ্যতে একটা গ্রাহকের বা একজন সঞ্চয়কারীর একটা বড় ধরনের সম্পদ পুঞ্জিভূত করার সুযোগ দেয়। সম্পদ তৈরি করার ক্ষেত্রে সুযোগ করে দেয়। এই সঞ্চয়কে বিনিয়োগে রুপান্তর করার জন্যই ক্ষুদ্র যারা সঞ্চয়কারী আছেন তাদের জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল নিয়ে এসেছে ব্লু-সিপ।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরুন প্রসাদ পাল বলেন, একদল অ্যানালিস্ট, যারা আর্থিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন এমন ব্যাংকার, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসহ বিশেষজ্ঞরা ব্লু-সিপের পোর্টফলিও ম্যানেজ করবে। বড় থেকে ছোট সঞ্চয়কারীরা এ সুবিধা পাবে। ইতোমধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ে এই গবেষণা পরীক্ষিত। এর ফল বেশ ইতিবাচক।
বরুন প্রসাদ পাল বলেন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটালের একটা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামো আছে। একটা ডাইভার্সিফাইড টিম আছে- যাদের মধ্যে উদ্যোক্তা, ইনভেস্টমেন্ট কমিটির উদ্যোক্তা, সিনিয়র চার্টার্ড একাউন্টেন্ট, সিএফএ হোল্ডার এবং ক্যাপিটাল মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। এমন ব্যক্তিত্ব আছেন বিধায় সবার সমন্বয়ে একটা কাঠামোগত পদ্ধতিতে এই পোর্টফলিও সেবাটা দেয়া হবে।
ব্লু-সিপ প্রোডাক্টের প্রধান ইনাম আহমেদ হাসান বলেন, বড় বিনিয়োগকারীরাও কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন ব্লু-সিপে। এই বিনিয়োগের অভিজ্ঞ পোর্টফলিও ব্যবস্থাপকেরা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবেন। সাধারণত মূল্যস্ফিতিকে সমন্বয় করে যে সঞ্চয় হয় তার পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম হয়। কিন্তু ব্লু-সিপে বিনিয়োগের মাধ্যমে সঞ্চয়টা একটা মহীরুহ হয়। বড় আকারে মুনাফা তৈরি করে। এছাড়া জাতীয় বাজেট অনুসারে ব্যক্তি বিনিয়োগ ১৫ শতাংশ করের ব্যবস্থা উঠে যাওয়ায় এক্ষেত্রে পুরো ব্যক্তি বিনিয়োগটাই কর অব্যাহতি পাবে। পাশাপাশি লভ্যাংশটা করমুক্ত থাকবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজের এমডি এএইচএম নাজমুল আহসানসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।