- মীর মশাররফ হোসেনের ‘জমিদার-দর্পণ’
জমিদার শ্রেণির প্রজা সাধারণ ও নারীদের ওপর শোষণ ও নির্মাতনের বস্তুনিষ্ঠ ধারাভাষ্য ‘জমিদার দর্পণ’ নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের অমর কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে ২দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার সমাপনী দিনে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়ায় মীর মশাররফ হোসেনের বসতভিটায় এই নাটক মঞ্চস্থ হয়।
জমিদারের কারাগার থেকে মুক্তি পাবার পর আবু মোল্লা জমিদার বাড়ির নিকটস্থ এক বাগানে নূরুন্নাহারের মৃতদেহের সন্ধান পায়। আবু মোল্লা জমিদার হায়ওয়ান আলীর বিরুদ্ধে মামলা করে। জমিদারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়ে মামলার সাক্ষী ও ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার আদালতে মিথ্যা সাক্ষী দেয়। আদালত হায়ওয়ান আলীকে বেকসুর খালাস দেয়। মামলা করার কারণে হায়ওয়ান আলী আবু মোল্লার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়।
বাস্তবতা হলো, জমিদাররা তাদের জমিদারীকে যেমন তাদের ব্যক্তিগত বা নিজস্ব সম্পত্তি মনে করতো তেমনি তাদের অধীনস্থ প্রজা ও তাদের সুন্দরী স্ত্রী ও মেয়ে সন্তানদেরও তাদের নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করতো। আবু মোল্লা ও তার স্ত্রীর প্রতি জমিদার হায়ওয়ান আলীর আচরণ এ বাস্তবতাকে প্রস্ফুটিত করেছে। তৎকালীন হায়ওয়ান আলীরা মনে করতো তাদের জমিদারির অধীনস্থ তরুণীরা তাদের নিজস্ব সম্পদ। তাই তাদের ভোগ করাটা জমিদারের অধিকার হিসেবেই বিবেচিত হতো।
জমিদার শ্রেণির শোষণ ও নির্যাতনের স্বরূপ উন্মোচনে নিজস্ব অভিজ্ঞতালব্ধ এক সত্য ঘটনার ভিত্তিতে মীর মশাররফ হোসেন এই নাটক রচনা করেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর আগে বিকেলে সমাপনি দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক (উপ-সচিব) মো. আরিফ-উজ-জামান সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম, কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিশির কুমার রায়, কুমারখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) বিনয় কুমার সরকার, বিশিষ্ট কবি সৈয়দ আবদুস সাদিক, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগর। আলোচনা সভা শেষে মীর মশারফের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।




