- দুঃশ্চিন্তায় জেলেরা
দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মোহনাঞ্চলে সাধারণত এখন ইলিশ মাছের মৌসুম। আশানুরূপ ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলেরাল। টানা ২২ দিন অবরোধ শেষে নদীতে মাছ ধরতে জাল ফেলেছেন নিমদী এলাকার হোসেন ব্যপারি (৩৫)।
প্রতিদিন সকাল ১০টার দিকে জাল ফেলে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৩ দফায় জাল তুলেছেন তিনি। ওই তিনবারে জাল তুলে ইলিশ পেয়েছেন মাত্র দুইটি ইলিশ। অথচ বর্তমানে চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পরার কথা ছিল জেলের জালে। ফলে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে হোসেনের মতো শত শত জেলেকে।
স্থানীয় ও মৎস অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের কয়েকটি ইলিশ উৎপাদন কেন্দ্রের মধ্যে বাউফল একটি অন্যতম জায়গা। উপজেলার ৪৫ কিলোমিটা সীমানা জুড়ে রয়েছে তেঁতুলিয় নদী। এই নদীতে শত শত টন ইলিশ প্রতি বছর ধরা হয় এখান থেকে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও চলে যায় এখানকার মাছ।
তাই তেঁতুলিয়া নদীর ইলিশ রক্ষায় প্রতি বছর ২২ দিন অবরোধ থাকে নদীতে। অবরোধের সময় সব ধরনের মাছ শিকার, বাজারজাত করণ, ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ থাকে। গত ২৮ অক্টোবর ছিল অবরোধের শেষ দিন। অবরোধ শেষে গত ২দিন মাছ শিকারের উৎসবে নেমে পড়েন জেলেরা কিন্তু সে উৎসব যেন উৎকন্ঠায় পরিনত হয়েছে গত দুই দিনে। কোনো মাছ নেই নদীতে। সব জেলে দাদন নিয়ে থাকেন সারাবছর জুড়ে। ইলিশি মৌসুমে সে দাদন পরিষোধ করার কথা। কিন্তু সংকটে ঋনের বোঝা ভাড়ি হবে বলে আশঙ্কা করছেন মৎস্য ব্যাবসায়ীরা।
তেতুলিয়া নদীতে প্রায় পাঁচ হাজার জেলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। সকাল ও সন্ধ্যা দুই বেলা নদীতে জাল ফেলে মাছ শিকার করে থাকেন।
জামাল মাতুব্বর নামের এক জেলে বলেন, ২২ দিনের অবরোধে আমাদের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়েছে। মহাজনদের কাছ থেকে দাদনের (ঋণ) টাকা এনে জাল কিনেছি। নৌকা মেরামত করেছি। মাছ বিক্রির টাকায় ঋন শোধ করবো ভেবেছি। কিন্তু নদীতে জাল ফেলে ইলিশ মিলছেনা। দাদনের টাকা শোধ করবো কিভাবে।
একই গ্রামের জেলে বাপ্পি ব্যাপারী জানান, এভাবে চলতে থাকলে তাদেরকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধের সুযোগ থাকবেনা। জাল ও নৌকা বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করতে হবে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে,অবরোধের সময় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রায় সব জেলেরা রাতের অন্ধকারে মাছ শিকার করে থাকে। যারফলে নদী মাছ শুণ্য হয়ে পড়েছে। এ জন্য জেলেরাই দায়ি বলে মনে করেন তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম বলেন, নির্দিষ্ট সময় প্রজনন শেষে ইলিশ তাদের গতিপথ পরিবর্তন করেছে। তাই হয়তো তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না। আগামী ১-২ সপ্তাহের মধ্যে তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।




