দীর্ঘ ১০ বছর পর লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপি কমিটি দিয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর রামগঞ্জ উপজেলা কমিটিতে সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক মোজাম্মেল হোসেন মজুকে সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মো মনোয়ার হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম মারুফ ভূইয়া, মোঃ আবুল কাশেম, নজরুল ইসলাম পিন্টু, মজিবুর রহমান, ফয়েজ উল্ল্য ভূইয়াকে যুগ্ম-আহ্বায়ক শেখ মাহবুবুর রহমান বাহারকে সদস্য সচিব করে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক হাছিবুর রহমান হাছিব ও সদস্য সচিব শাহাবুদ্দিন সাবু।
কমিটি ঘোষণার একদিন পর রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, তিনি এ কমিটি মানে না। যারা রামগঞ্জে শাহাদাত হোসেন সেলিমের সাথে এলডিপি করেন তাদেরকে এ কমিটিতে মূল্যয়ন করা হয়েছে। গত ১৮-২০ বছর দলের সাথে যাদের সম্পর্ক নাই তাদের এ কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। এটা বিএনপির কমিটি না এটা রামগঞ্জ উপজেলা এলডিপির কমিটি। তিনি বলেন, জিপ গাড়ি ও টাকা দিয়ে এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেমিল এ কমিটি কিনে নিয়েছে। তিনি অভিয়োগ করেন এ কমিটির জন্য জেলা বিএনপির এক শীর্ষনেতাকে এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম জিপ গাড়ি কিনে দিয়েছেন আরেক নেতাকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে কমিটি কিনে নিয়েছে।
আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মোজাম্মেল হোসেন মজু দীর্ঘ ১৮ বছর এলাকায় আসেন না, দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে না। তাকে সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়েছে। শেখ মাহবুবুর রহমান বাহার শারীরিকভাবে অসুস্থ গত ৬ বছর কোনো দলীয় কর্মসূচিতে নাই তাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। ফয়েজ উল্ল্য ভূইয়া কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক চট্রগ্রামের একটি সিমেন্ট কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার তাকে উপজেলা কমিটিতে যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়েছে। জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক টিপু সুলতান ভূইয়াকে উপজেলা বিএনপির সদস্য করা হয়েছে। রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা ভিপি আব্দুর রহিমকে সাধারণ সদস্য করা হয়েছে। শাহাবুদ্দিন তুর্কি দলের সব কর্মসূচিতে থেকে কর্মসূচি সফল করা সাংগঠনিক নেতাকে যুগ্ম-আহ্বায়ক না করে সদস্য করা হয়েছে।
নতুন কমিটির সদস্য সচিব মাহবুবুর রহমান বাহার ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আওয়ালের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা নিয়ে তার পক্ষে কাজ করেন বলে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা শাহাবুদ্দিন তুর্কি।
রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভিপি আব্দুর রহিম বলেন, যে কমিটি ৩০ শে অক্টোবর দেওয়া হয়েছে। এটা বিএনপির কোন কমিটি না। এ কমিটি অন্য রাজনৈতিক দলের নেতার পরামর্শে দেওয়া হয়েছে। যাতে বিএনপি রামগঞ্জে দুর্বল হয়ে এলডিপির সাথে মিশে যায়। এ কমিটিতে ১৫ বছর ধরে যারা আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে আছে, যারা জেল খেটেছে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হয়নি। যারা ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ র্নিবাচনে নৌকার পক্ষে ভোট করেছে তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। আমরা এ কমিটি মানি না। উৎকোচের বিনিময়ে রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কমিটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স¤পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। রাজনীতি পদ পদবী না পেলে এসব অভিযোগ করা হয়। তিনি বলেন, সামনে আন্দোলনের এ সময় যারা সাহস নিয়ে রাজপথে উপস্থিত থেকে আন্দোলন করতে পারবে তাদেরকেই নিয়েই কমিটি করা হয়েছে। সদস্য সচিব শারীরিকভাবে অসুস্থ তাকে কেন সদস্য সচিব করা হয়েছে? এ বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি শারিরিকভাবে এখন অসুস্থ হলেও সুস্থ হয়ে রাজপথে আন্দোলন করবেন। আর এলডিপির সেলিম বিএনপির কেউ না। তার কথায় বিএনপির কমিটি দেওয়ার প্রশ্ন আসে না।
লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান হাসিব বলেন, আমার যে গাড়ি ছিলো তা বিক্রি করে দিয়েছি, টাকা ও গাড়ির বিনিময়ে এলডিপির কাছে কমিটি বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। তিনি বিএনপির কেউ না। আবার তিনি দলের বিরুদ্ধে এভাবে কেউ বললে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। বিএনপির কে কি করলে কি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবে, এ বিষয়ে আপনি কিভাবে বলেন? এ বিষয়ে তিনি কোনো কিছু না বলে ফোন কেটে দেন।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, কমিটি দিলে এ রকম অভিযোগ করেন। যারা ১৬/১৭ ধরে দলের হাল ধরেছে,তাদের বাদ দিয়ে যারা ২০০৮ সালে নৌকার ভোট করেছে তাদের দিয়ে কমিটি দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। গাড়ি নিয়ে এলডিপির কাছে কমিটি বিক্রির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
আনন্দবাজার/কআ