ঢাকা | সোমবার
১০ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তাঁতের গামছায় ৩০ পরিবারের স্বপ্ন

তাঁতের গামছায় ৩০ পরিবারের স্বপ্ন
  • সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নারীদের কর্মসংস্থান হবে গ্রামে

স্বল্প পুঁজির জোরে বাড়িতেই গামছা বুনছেন প্রায় ৩০ পরিবারের নারী। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে গ্রামের তাঁতপল্লীতে বড় কর্মসংস্থান গড়ে ওঠেনি। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের জনপদ থালতা-মাঝগ্রাম ইউনিয়নের কালা সিংড়া গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে গামছা তৈরির তাঁত। তবে বেশিরভাগ পরিবার দরিদ্র। সরকারিভাবে স্বল্পসুদে ঋণ এবং পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গ্রামেই গড়ে উঠতে পারে শতশত নারীর কর্মসংস্থান।

অন্যান্য শিল্পের মধ্যে তাঁত একটি শিল্প। আর এ শিল্পকে শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন কালা সিংড়া গ্রামের নারীরা। তবে অর্থের সঙ্কট থাকায় নারীরা শত চেষ্টা করেও তাঁত শিল্পকে বেশিদূর নিয়ে যেতে পারছেন না। সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে গ্রামের তাঁতে তৈরি কাপড় দেশের বিভিন্ন জায়গাসহ দেশের বাইরেও রফতানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।

স্থানীয়রা জানান, কালা সিংড়া গ্রামে প্রতিদিনই ভোর থেকে শোনা যায় তাঁত মেশিনের খটখট শব্দ। এই গ্রামের নারীর খুবই পরিশ্রমী। বাড়ির ভিতর-বাহিরে কাঠ ও বাঁশের তৈরি তাঁতের মেশিনে নারীরা বুনছেন গামছা। বিভিন্ন রঙের সুতা মিলে তাঁতে সাড়ে তিনহাত একটি গামছা তৈরিতে তাদের খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। প্রতিটি গামছা খুচরা বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা। শহর এবং বাজারের বড় দোকানিরা পাইকারী নেন প্রতিটি গামছা ৫০টাকা। তাঁত পল্লীর দরিদ্র নারীরা সংসারের কাজের ফাঁকে গামছা বুনে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পুরুষরা করেন কৃষিসহ অন্যান্য কাজ। পাশাপাশি গামছা তৈরিতে নারীদের সহযোগিতা করেন তারা।

তাঁতীরা জানান, গামছা তৈরিতে ব্যাপক পরিশ্রম করতে হয়। লাভ হয় সামান্য। বাজারে ঐতিহ্যবাহী তাঁতের গামছার ব্যাপক চাহিদা থাকায় কালা সিংড়া গ্রামের পরিবারগুলো পেশা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে গামছা তৈরি ও বিক্রি করছেন। গামছা বিক্রির সামান্য লাভের টাকা দিয়ে নারীরা সংসারের ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ বহন করছেন। গামছা বিক্রি হচ্ছে বগুড়া জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে। বড় দোকানিরাও নিচ্ছেন পাইকারী দামে।

তাঁত পল্লীর নারী জোসনা বেগম বলেন, তিনি ১৭-১৮ বছর ধরে তাঁতে কাজ করেন। সরকারি বেসরকারি কেউ তাদের খোঁজ রাখেনি। সরকার সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে তারা আরও ভালোভাবে গামছা তৈরি ও তা বিক্রি করে আয়-রোজগার বাড়াতে পারবেন।

তাঁতী আবিয়া বেগম বলেন, বাপ-দাদারা গামছা তৈরি করতেন। তাদের থেকেই তাঁতে গামছা তৈরি শিখেছেন। তিনি প্রায় ৩০-৩৫ বছর ধরে গামছা তৈরি করেও পরিবারের উন্নতি হয়নি। গ্রামের প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতে তাঁতের কাপড় তৈরি করা হয়।

তাঁতী রোজীনা পারভিন বলেন, সহযোগিতা পেলে তারা বাড়িতেই আরও তাঁতের মেশিন বসাবেন। গড়ে উঠবে নারীদের কর্মসংস্থান।

এ প্রসঙ্গে নন্দীগ্রাম জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মোছা. মাহফুজা চৌধুরী বলেন, কালা সিংড়া গ্রামের নারীরা তাঁতে গামছা বুনছেন। জাতীয় মহিলা সংস্থার মাধ্যমে তাদেরকে ঋণ সহায়তা দেওয়া হবে। গ্রামের নারীরা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন