ঢাকা | সোমবার
১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেঁয়াজচাষে মহাজনী ঋণ

পেঁয়াজচাষে মহাজনী ঋণ

নতুন পেঁয়াজের জাত ও দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণ প্রক্রিয়াসহ  চাষিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে: মিতা রানী সরকার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ঈশ্বরদী

পাবনাসহ ঈশ্বরদীর চাষিরা পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি শ্রমিকরা সূর্য ওঠার আগেই হাজির হচ্ছেন মাঠে। প্রতিদিন পেঁয়াজ লাগিয়ে মজুরি পাচ্ছেন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা করে। কেউ পাশের গ্রাম থেকে, কেউ আবার দূরের গ্রাম থেকে আসছেন পেঁয়াজ লাগাতে। তবে শ্রমিকরা ভালো মজুরি পেলেও কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা। জ্বালানি তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই পেঁয়াজ চাষ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।

কৃষিশ্রমিকরা দিনভর কাজ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছেন। মজুরিও পাচ্ছেন ভালো। এলাকার শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষ পেঁয়াজের মাঠে। বাড়ির নারী ও পুরুষ সদস্যরাও কাজে সহায়তা করছেন। পেঁয়াজ চাষিরা জানান এ সময় কৃষিশ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে।

উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে জানা যায়, জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে হলে শুরুতেই পেঁয়াজ কেনা, জমি খাজনা, চাষ, সেচ, সার, গোবর, নিড়ানি, শ্রমিক ও উত্তোলন খরচ মিলিয়ে বিঘা প্রতি প্রায় ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এর পাশাপাশি যারা অন্যের জমি খাজনা নিয়ে আবাদ করেন তাদের বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়ে থাকে। যত দিন যাচ্ছে খরচ ততই বাড়ছে। এছাড়া অনেক ছোট-বড় চাষি চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েও পেঁয়াজ চাষ করেন।

কৃষকরা বলেন, পেঁয়াজ চাষে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার সরকারি ঘোষণা থাকলেও সাধারণ চাষিরা সে সুবিধা পাচ্ছেন না। অনেকেই চড়া সুদে মহাজনী ঋণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গত বছরে বছরে চাষাবাদ করে কেউ কেউ চাষাবাদ করেনি এবার, তার মূল কারণই হলো কৃষকরা লাভবান না হওয়ায় পেঁয়াজ চাষ করছে না।

সাহাপুর ইউনিয়নের কৃষক আশরাফুজ্জামান উজ্জল সরদার দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, আমি একশো বিঘা জমি চাষাবাদ করি। এবারো আমার জমিতে পেঁয়াজ চাষসহ কয়েক রকমের ফসল চাষ করছি। এ চাষাবাদ অবস্থায় কৃষি অধিদপ্তর থেকে কোনো প্রতিনিধি সহযোগিতা বা পরামর্শ করেনি। আমার শত বিঘা আবাদ থাকলেও কোন কৃষি অফিসারের সহযোগিতা পাইনি।

ছলিমপুর ইউনিয়নের মেহেদী ইসলাম বলেন, আমি কিং জাতের পেঁয়াজ চাষ করছি। সরাসরি পেঁয়াজের গুটি মাটিতে রোপন করেছি। সেগুলা থেকেই গাছ বের হচ্ছে। আমি নিয়মিত পরিচর্যা করছি। দুই বিঘাতে পেঁয়াজ চাষ করছি। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে আমার মতো ছোট কৃষকরা সামেন বছর থেকে বেশি করে আবাদ করতে পারবে। 

লক্ষীকুন্ডার আখতার নামের আরেক কৃষক বলেন, আমি বর্তমানে সাত বিঘা জমি খাজনা নিয়ে পেঁয়াজ আবাদ করছি। বিঘা প্রতি সব খরচ মিলিয়ে আমার ৬০/৬৫ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। আমি গত বছর ২৩০০ টাকা মণ চারা কেনা ছিল ওগুলাই লাগাচ্ছি। গত বছর পেঁয়াজের আবাদ করে দেড় লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে দাম না পাওয়ায়। আমাদের কোনো কৃষি অফিসার দেখতেও আসে না। আমি টেনস এগ্রো কোম্পানির কর্মকর্তা ও ডিলারের পরামর্শে চাষাবাদ করতেছি।

দাদপুরের লিটন নামের কৃষক বলেন, আমি মুড়িকাটা পেঁয়াজের বেছন কিনে লাগাইছি। আমি পেঁয়াজের বেছন আগে কিনেছিলাম বাড়িতে এনে ২২১৫ টাকা মণ পড়েছিল। পড়ে অন্য কৃষকরা ১২০০-১৬০০ টাকা মণ কিনেছে। এতে আমার খরচটা বেশি সবার চেয়ে। আমি কয়েকবার নিড়াইছি, যত্ন করতেছি। প্রতিবছরই আবাদ করি গতবছর কোনো লাভ হয়নি পেঁয়াজ আবাদ করে। ৬০০/৭০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি। এবারো চার বিঘা আবাদ করেছি ফলে এখন পর্যন্ত কোন সরকারি কৃষি অফিসার যোগাযোগ করেননি। আমরা কৃষক যারা আছি সরকারি সহযোগিতা পেলে ভালো কিছু করতে পারবো।

কৃষকদের বিষয়ে টেনস এগ্রো লিমিটেড কোম্পানির জুনিয়র টেরিটরি অফিসার তারেক রহমান বলেন, আমরা যতোটুকু পারি কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকি। কৃষকদের সরাসরি দেখিয়ে দিই কোন রোগ হলে কোন ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। কৃষক যাতে লাভবান হয় সে জন্যই কাজ করছি কৃষকদের সাথে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরর মিতা রানী সরকার জানান, এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে। এটার বেশি চাষ হয় লক্ষীকুন্ডা, সাহাপুর ও ছলিমপুর ইউনিয়ন’র এলাকাগুলোতে। ঈশ্বরদীতে এবার আমাদের এ বছরের লক্ষমাত্রা ৬৮০ হেক্টর, ফলনের টার্গেট ১২.৫৫ টন। গতবার অর্জন হয়েছিল ৭৩৫ হেক্টর, ফলন হয়েছিল ১২.৫ টন।

কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ, পরামর্শ ও ট্রেনিং দেয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে মিতা রানী সরকার বলেন, কৃষি বিভাগের তরফ থেকে কৃষকদের পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে নতুন পেঁয়াজের জাত ও দীর্ঘস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন