ঢাকা | শুক্রবার
২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজারে রাতেই সরিয়ে নেয়া হবে ছয়লাখ মানুষ

কক্সবাজারে রাতেই সরিয়ে নেয়া হবে ছয়লাখ মানুষ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডব থেকে রক্ষা পেতে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন৷ এছাড়াও ২৭৩৬ টি গবাদিপশু নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলের আরো অন্তত ছয় লাখ মানুষকে রাতের মধ্যেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ। ইতিমধ্যে জেলার ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। মাঠে নামানো হয়েছে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। দুপুর থেকে উপকূলের লোকজনকে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সতর্ক এবং নিরাপদ স্থানে সরে যেতে অনুরোধ জানিয়ে চালানো হচ্ছে প্রচারণা।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর প্রচণ্ড উত্তাল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সোমবার মধ্যরাতে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। কক্সবাজার উপকূলকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কায় আছেন কক্সবাজার জেলার সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া ও মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলার উপকূলীয় দেড় শতাধিক গ্রামের ১০ লাখ মানুষ। বেশ কয়েকটি উপজেলায় ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙা আছে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গতকাল রোববার সকাল থেকে আকাশ কালো মেঘে ডাকা পড়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সারাদিন সূর্যের দেখা নেই । সাগরও প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৭-৮ ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আঘাত হানছে। বইছে ঝোড়ো হাওয়া। থেমে থেমে চলছে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ বলেন, উপকূলের অতিমাত্রায় ঝুঁকিতে থাকা ছয় লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হবে।সোমবার সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে ।সেই সাথে ২৭৩৬ টি গবাদিপশু নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়। বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং চলছে । বিকেল থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনার কাজ শুরু হয় । এ জন্য জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৭৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ৬ লাখ ৫ হাজারের বেশি। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২ হাজার ২০০ জন পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ এবং ৮ হাজার ৬০০ জন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবী ও সিপিপি সদস্য। আশ্রয়শিবিরে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, গর্ভবতী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে কুতুবদিয়া উপজেলার মানুষ। দ্বীপের চারদিকে বেড়িবাঁধ রয়েছে ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ছয় কিলোমিটার ভাঙা। এসব ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পাঁচটি ইউনিয়নের অন্তত ৪৫টি গ্রাম তলিয়ে যেতে পারে, এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, একদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব, অন্যদিকে চলছে অমাবস্যার পূর্ণ জোয়ার। সব মিলিয়ে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে শুধু কুতুবদিয়াতে ৪০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নে ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে আছে। বর্ষার জোয়ার ও প্লাবন ঠেকাতে সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিও ব্যাগ ও মাটি দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করলেও তাতে মানুষের শঙ্কা দূর হচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে অস্থায়ী এ বাঁধ বিলীন হতে পারে।

পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ আশ্রয়কেন্দ্র নিয়েও মানুষের মনে শঙ্কা কাজ করছে। জেলার মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়াতে ঝুঁকিপূর্ণ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র আছে ৫০টির বেশি।

মহেশখালীর ধলঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে এই ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিসিডিবি উপকূলীয় এই ইউনিয়নে ১০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে দেয়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে কয়েক বছর ধরে পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস হলে ইউনিয়নের ১৫ হাজার মানুষ ঝুঁকিতে পড়বে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. জাহিদ ইকবাল বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি আরও পাঁচ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগে কাউকে ঝুঁকিতে ঠেলে দেওয়া হবে না। সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। মাঠে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০৮টি মেডিকেল টিম। তা ছাড়া লোকজনের জরুরি প্রয়োজনে ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ৩২৩ মেট্রিক টন চাল, ২০০ বান্ডিল ঢেউটিন, ৯৯০টি তাঁবু ও ১ হাজার ১৯৮ প্যাকেট শুকনা খাবার মজুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলার সব সরকারি কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

আনন্দবাজার/কআ

সংবাদটি শেয়ার করুন