ঢাকা | বুধবার
৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাস ধর্মঘটের কবলে নিয়োগ পরীক্ষা

বাস ধর্মঘটের কবলে নিয়োগ পরীক্ষা

ইউনিয়ন সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষা বাগেরহাটে ৬৬, খুলনায় ৬৪ ভাগ অনুপস্থিত

পরিবাহন নেতাদের ডাকে চলমান ধর্মঘটের মধ্যেই সারাদেশের মত খুলনা ও বাগেরহাটে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে পরিবহন বন্ধ থাকায় পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে পারেনি অনেক নিয়োগ প্রত্যাশীরা। যানবাহন না পাওয়ায় খুলনায় ৩৫ দশমিক ৬৮ ও বাগেরহাটে ৩৪ শতাংশ পরিক্ষার্থী এ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সে হিসেবে খুলনায় ৬৪ ও বাগেরহাটে ৬৬ ভাগ পরিক্ষার্থী কেন্দ্রে আসেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদের নিয়োগ পরীক্ষায় বাগেরহাটে ৮ হাজার ৫৮৮ জন পরীক্ষার্থী ছিল। তবে, মাত্র ২ হাজার ৯২৯ জন নিয়োগ প্রত্যাশী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। সেই হিসেবে ৬৬ ভাগ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। অধিকাংশই যানবাহন না পাওয়ার কারণেই কেন্দ্রে আসতে পারেনি। এছাড়া খুলনায় ৪ হাজার ৭৭৩ জন পরিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। পরিক্ষার্থী ছিল ১৩ হাজার ৩৭৬ জন।

সমাজ সেবা অধিদপ্তর, খুলনার উপ-পরিচালক খান মোতাহার হোসেন বলেন, খুলনায় ৩৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ পরিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। ১৩টি কেন্দ্রে ১৩ হাজার ৩৭৬ জন পরিক্ষার্থীর ব্যবস্থা করা ছিল। তিনি বলেন, ‘একযোগে বাংলাদেশে ৬৪টি জেলায় এই পরীক্ষা হয়েছে। এটা পূর্ব ঘোষিত। খুলনায় বাস বন্ধ হলে আমাদের কিছু করার ছিল না। যারা পরীক্ষার্থী ছিল তাদের উচিত ছিল অন্তত একদিন আগে শহরে চলে আসার।’

শুক্রবার ভোরে মোড়েলগঞ্জ থেকে বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েও আসতে না পারা এক পরীক্ষার্থী  আব্দুল্লাহ বলেন, শুক্রবার ভোরে ভাড়ার মোটরসাইকেলে রওনা দিয়েছিলাম। তবে, সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ডে আধাঘণ্টা আটকে রেখে বিএনপির লোক ভেবে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অনুরোধ করলেও তারা যেতে দেয়নি।

একশ’ কিলোমিটার দূরের কয়রা থেকে খুলনায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের হলে ৩০ জনের স্থলে মাত্র ৯ জন পরিক্ষা দিয়েছে। মোটরসাইকেল ভাড়া করে আসতে হয়েছে। ফিরতে হবে একইভাবে। বেকার অবস্থায় ৩০০ টাকার স্থলে দেড় হাজার টাকা গুনতে হলো। অন্তত পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এ দিনটাতে বাস বন্ধ না করলেই পারত।

খুলনার পাইকগাছার পরীক্ষার্থী শাহানা পারভীন বলেন, ‘আমি পরীক্ষার জন্য বেশ প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। খুলনাতে বাস বন্ধ থাকায় আর পরীক্ষা দিতে যাওয়া হয়নি।

অন্যদিকে যারা আগে থেকে শহরে এসে চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, তাদেরও বাড়িতে ফিরতে ভোগান্তি হচ্ছে নানা রকমের।

অর্ণব মণ্ডল নামের আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বাড়ি কয়ারাতে। খুলনা শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে। গতকাল খুলনাতে এসেছিলাম। আজ সকালে চাকরির পরীক্ষা দিয়েছি। তবে এখন যেতে পারছি না। বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি বাস চলছে না। তাই ভাবলাম লঞ্চে যাব। কিন্তু সেখানেও গিয়ে দেখি লঞ্চ চলছে না।’

বাগেরহাটের বাসাবাটি রহমানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়া শিউলি নামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, বাসা থেকে কেন্দ্রের দুরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার। ধর্মঘটের কারণে এতটুকু পথ যেতে ১ ঘন্টা লেগেছে। কিছুপথ হেটে, কিছুপথ ভ্যানে করে যেতে হয়েছে। ভোগান্তির কোনো শেষ ছিলো না। আমাদের কক্ষে ৪০ জনের সিট থাকলেও উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১১ জন।

খানজাহান আলী কলেজের এক পরীক্ষার্থী বলেন, ৮০ জনের আসন সিট থাকলেও, আমাদের কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২৫ জন। রাজনীতির এই রেশারেশীতে যারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি, তাদের দায়িত্ব কে নিবে এমন প্রশ্ন করেন এই নিয়োগ প্রত্যাশী।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শাহিনুজ্জামান বলেন, ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে বাগেরহাটে ৮ হাজার ৫৮৮ জন নিয়োগ প্রত্যাশী পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে ১০ কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন ২ হাজার ৯২৯ জন। শতাংশের হিসেবে যা মাত্র ৩৪ ভাগ। এ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি ৫ বছর আগের হওয়ায় অনেকের অন্যত্র চাকুরি হয়েছে, আবার কেউ কেউ মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করায় মেসেজ পায়নি। এসব কারণে পরীক্ষার্থী কম আসতে পারে বলে জানান তিনি।

১৬তম গ্রেডভুক্ত তৃতীয় শ্রেণির সমাজকর্মী পদে জনবল নিয়োগের জন্য শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত লিখিত/এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন