ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লোডশেডিং নাকি কারসাজি?

লোডশেডিং নাকি কারসাজি

চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ না থাকায় প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে :  আব্দুল্লাহ আল মামুন, নির্বাহী প্রকৌশলী, হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড

হবিগঞ্জ শহরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না। যে কোনো সময় লোডশেডিং হচ্ছে, তাও আবার ঘণ্টায় একাধিকবার। অনেক সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে আর আসার খবর থাকে না। এতে অনেক সময় ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। যে কারনে একদিকে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শহরবাসী। অন্যদিকে সীমাহীন লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তাছাড়া হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহে কারসাজি ও নিয়মবহির্ভূত ব্যবস্থাপনার অভিযোগ। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ দিনে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করছে। তাদের দাবি, চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ না থাকায় দৈনিক ৭ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের আওতায় পড়েছে হবিগঞ্জ শহর।

স্থানীয়রা জানায়, পিডিবি’র আওতাধিন হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। সরকারি ঘোষণাকে উপেক্ষা করে নির্ধারিত সময়ে লোডশেডিং না দিয়ে কারসাজি করছেন বিদ্যুতের কর্মকর্তারা। এতে নিয়মবহির্ভূতভাবে ঘন-ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে মানুষজন দিনের বেলা সঠিকভাবে কাজকর্ম করতে পারছেন না, আবার রাতের বেলা যে শান্তিতে ঘুমাবেন তারও উপায়ও নেই। বিদুৎ একবার গেলে আর আসে না। আবার এলেও কোন কোন সময় ঘণ্টায় ৩ থেকে ৪ বার লোডশেডিং হয়। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী লোডশেডিং দেয়ার কারণে ঠিকমত ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ ঘণ্টায় কয়েকবার লোডশেডিংয়ের কারণে ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া এইচএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীরা ঠিকমত পড়াশুনা করতে পারছে না। অনেক সময় রাতের বেলায় মোমবাতি জ্বালিয়ে তাদের লেখাপড়া করতে হচ্ছে। হাসপাতালসহ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে প্রচণ্ড গরমের কারণে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক মানুষ। হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় গরমের কারণে দুই শিশু মারা গেছে বলেও রয়েছে অভিযোগ। হাসপাতালে লোডশেডিং দেখা দিলে গরমের অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন রোগি ও তাদের স্বজনরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, পুরাতন ভবনে জেনারেটর থাকলেও নতুন ভবনে এখনও জেনারেটর চালু হয়নি। যে কারণে লোডশেডিং দেখা দিলে বিকল্প কোনো উপায় থাকে না। এতে রোগী ও তাদের স্বজনদের গরমে কষ্ট করতে হয়।

হবিগঞ্জ শহরের একাধিক গ্রাহক জানান, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও শহরে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই থাকছে না বিদ্যুৎ। তাছাড়া অফিস আদালতের কাজকর্মেও ব্যাঘাত ঘটছে। সীমাহীন এ লোডশেডিংয়ের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ শহরের শিক্ষার্থীরা ঠিকমত পড়াশোনা করতে পারছেন না।

কিচেন টোয়েন্টিফোরের স্বত্ত্বাধিকারী প্রদীপ দাস জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। ঘোষণা ছাড়া লোডশেডিং হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এ বিষয়ে কয়েকবার ফেসবুকে পোষ্ট করেছি। এতে কিছুই হচ্ছে না। ঘোষণানুযায়ী নির্ধারিত সময়ে লোডশেডিং দেয়া হলে সুবিধানুযায়ী কাজ-কর্ম করা যেতো।

বিদ্যুৎ গ্রাহক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম শিবলী খান বলেন, ‘সরকার যা বলছে, সে অনুযায়ি বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আমরা পিডিবিকে শিডিউল দিয়েছি, তবে তারা সেটা মানছে না। লোডশেডিংয়ে সীমা ছাড়িয়ে  গছে হবিগঞ্জের বিদ্যুৎ বিভাগ। রাতের বেলায় যে সময়ে বিদ্যুৎ থাকে, সেটা কাজে লাগে না। ঘোষণা দিয়ে নির্ধারিত সময়ে লোডশেডিং দেয়া হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কাজ করতে সহজ হতো। বিদ্যুৎ আসার পর কাজের প্রস্তুতি নেয়া হলেই আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে কাজে ব্যাঘাত ও ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষের ভোগান্তি কমাতে ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং দিলে ভালো হবে। এতে বাণিজ্য করতে সহজ হবে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানান তিনি।

হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হবিগঞ্জ শহরের ১৬ মেঘাওয়াট চাহিদা থাকলেও আমরা ৮ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছি। যে কারণে দৈনিক ৭ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের আওতায় পড়েছে হবিগঞ্জ শহর। তবে সাধারণ গ্রাহকের দাবি ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখা দিচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা সঠিক নয়, শহরে প্রতিদিন বিভিন্ন সময়ে ৭ ঘণ্টাই লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন